সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়: জীবন, পুরস্কার, কেরিয়ার এক ঝলকে
পুরো নাম: সৌরভ চণ্ডীদাস গঙ্গোপাধ্যায়
জন্ম: ৮ জুলাই, ১৯৭২
উচ্চতা: ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি
জাতীয়তা: ভারতীয়
ক্রীড়াবিদ: প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক, বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান
পরিবার:
বাবা: চণ্ডীদাস গঙ্গোপাধ্যায়
মা: নিরূপা গঙ্গোপাধ্যায়
স্ত্রী: ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়
কন্যা: সানা গঙ্গোপাধ্য়ায়
১৯৭২ সালের ৮ জুলাই কলকাতার বেহালায় জন্মগ্রহণ করেন দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার এবং ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে মহারাজ। অফ সাইডে শট খেলার অনুকরণীয় দক্ষতার কারণে তিনি ‘অফ সাইডের ঈশ্বর’ নামেও পরিচিত।
কেরিয়ারের সূচনা:
ইডেন গার্ডেনসে বাংলা-দিল্লি ফাইনাল রঞ্জি ট্রফি-র ম্যাচে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই অভিষেক ঘটে সৌরভের। যদিও ম্যাচটি শেষমেষ ড্র হয়। তবে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে স্বীকৃতি পায় বাংলা।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে মহারাজ:
১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআই অভিষেক হয় সৌরভের। তাতে তাঁর পরাফরমেন্স তেমন ভাল ছিল না। এর পাশাপাশি তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জন্য কুখ্যাত হয়ে ওঠেন।
এর পরেই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন সৌরভ। ফলে আবার ঘরোয়া প্রতিযোগিতাতেই ফিরতে হয় তাঁকে। তবে রঞ্জি ট্রফির পরের দুই মরসুমে অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় রাখেন। ভারতের ইংল্যান্ড সফরের ঠিক আগে দলীপ ট্রফি ম্যাচে তিনি ১৭১ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন এবং পুনরায় ভারতের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হন।
লর্ডসে টেস্ট ম্যাচে অভিষেকের সময় সর্বোচ্চ রান (১৩১) করেন সৌরভ। এর পর তিনি ফের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন এবং কেরিয়ারের প্রথম দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করা তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে রেকর্ড গড়েন।
টেস্ট সিরিজে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মোট ১৫৩৩ রান করেন। যার মধ্যে ৪০৮টি অর্ধশতক এবং ৩২৩৭টি ওডিআই ম্যাচের রান-সহ ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ৬২৩টি অর্ধশত রান রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সময় ওয়ান-ডেতে তিনি কেরিয়ারের সেরা ১৮৩ রান করেন।
অধিনায়কত্ব:
২০০০ সালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ওডিআই দলের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দলকে প্রথম সিরিজ জয়ে নেতৃত্ব দেন তিনি। ওই একই বছরে আইসিসি নক-আউট ট্রফির ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যান তাঁর দলকে। যদিও ওই দল হয়তো প্রচুর ট্রফি জিততে পারেনি, তবে তারা বিদেশের মাটিতে নিজেদের জড়তা কাটিয়ে উঠে বাইশ গজের লড়াই করার আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অধিনায়কত্বের জোরে ভারতীয় দল ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার টানা ১৬টি টেস্ট ম্যাচ জয়ের ধারা ভেঙে দেয়। সৌরভের কেরিয়ারের আর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এসেছিল ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে। লর্ডসে এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে ভারত। লর্ডসের ব্যালকনি থেকে প্রকাশ্যে টি-শার্ট উড়িয়ে উল্লাসে ফেটে পড়তে দেখা যায় মহারাজকে।
যদিও অধিনায়কত্বের দায়িত্ব বেড়ে যাওয়ার ফলে তাঁর ব্যাটিং পারফরমেন্স খারাপ হতে থাকে। ২০০৫ সালে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। এর পর ২০০৭ সালে তৎকালীন ভারতীয় কোচ গ্রেগ চ্যাপেলের সঙ্গে মতবিরোধ হয় সৌরভের এবং গ্রেগ অধিনায়কত্ব থেকেও বাদ দেন তাঁকে।
ক্লাব কেরিয়ার:
২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক কেরিয়ার থেকে অবসর গ্রহণ করেন মহারাজ। ওই বছরই শুরু হয় আইপিএল। কেকেআর-এর অধিনায়কত্ব পান সৌরভ। ২০১০ পর্যন্ত ওই দলেই খেলেন। তার পরের বছর তিনি পুণে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়া দলে যোগ দেন। দুটো মরসুম খেলার পরে আইপিএল থেকেও অবসর নেন তিনি। অবসর গ্রহণের পর তাঁকে কমেন্ট্রি করতে দেখা গিয়েছে। বর্তমানে সৌরভ বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট পদের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
পুরস্কার:
২০০৪ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করা হয় তাঁকে।
২০১৩-য় পশ্চিমবঙ্গ সরকার সৌরভকে বঙ্গবিভূষণ সম্মান দেয়।