হোলি একটি জনপ্রিয় হিন্দু উৎসব। একে বসন্ত উৎসব, রঙের উৎসব ও ভালোবাসার উৎসবও বলা হয়। এই উৎসবের সঙ্গে জড়িত আছে রাধা-কৃষ্ণের অমর প্রেম। তাছাড়া মন্দের উপর ভালর বিজয়কে চিহ্নিত করতেও এই উৎসব পালিত হয়। ভারত ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এবং পাশ্চাত্য সভ্যতাতেও এই উৎসব পালন করা হয়।
এই উৎসব সূচনা করে বসন্তের। পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। হোলির আগের দিন পালিত হয় হোলিকা দহন। যেদিন শুকনো কাঠকুটো ইত্যাদি জ্বালানো হয়। এর সঙ্গে জড়িত আছে হিরন্যকশিপুর বোন হোলিকার আগুনে পুড়ে মৃত্যু। তার পরের দিন হোলি পালিত হয়। বিভিন্ন রঙের আবীর ও জলে গুলে রঙ ব্যবহৃত হয়।
ভারতের ব্রজ অঞ্চলে যেখানে রাধা কৃষ্ণ বড় হয়েছেন সেখানে অত্যন্ত উৎসাহ সহ এই উৎসব পালিত হয়। এই উৎসব রাধা-কৃষ্ণের অমর প্রেমের সূচক।
অন্য একটি পৌরাণিক কাহিনী বলে পার্বতীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য দেবতারা শিবের কাছে ভালোবাসার দেবতা কামদেবকে পাঠায়। তপস্যায় বিঘ্ন ঘটায় তাঁকে ভস্ম করেন শিব। পরে কামদেবের স্ত্রী রতির তপস্যায় খুশি হয়ে শিব আবার কামদেবকে পুনর্জীবন দান করেন। সেই দিনটিও হোলি হিসাবে পালিত হয়।
জৈন আর বৌদ্ধ ধর্মের উপাসকরাও হোলি পালন করেন। মুঘল বাদশারাও আনন্দ সহকারে হোলি পালন করতেন। মহারাজা রঞ্জিত সিংহের আমলে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষও হোলি পালন করতেন।
হিন্দুদের কাছে বসন্তকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল হোলি। নেপালে এটি জাতীয় ছুটির দিন। হোলির আগের দিন হোলিকা দহন হয়। হোলিকা দহনের মতো, কাম দহনম ভারতের কিছু অংশে পালিত হয়।
বিভিন্ন পুরাণ, দশকুমার চরিত এবং কবি কালিদাসের লেখা, রত্নাবলী ইত্যাদি গ্রন্থে হোলির উল্লেখা আছে। হোলির সঙ্গে বিভিন্ন আচার জড়িত আছে।
এটি হোলির আগের দিন হয়। চিতার উপরে হোলিকাকে বোঝাতে একটি মূর্তি তৈরি করে তাতে আগুন ধরান হয়। হোলিকা হলেন হিরণ্যকশিপুর বোন, যিনি প্রহ্লাদকে মারতে চাইছিলেন।
এছাড়া রঙ নিয়ে খেলা তো আছেই। মথুরা অঞ্চলে ছেলেদের মেয়েরা লাঠি দিয়ে মারে। একে লাঠমারো উৎসব বলা হয়। ছেলেরা মেয়ের ছদ্মবেশে আসে।
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে হোলির আলাদা নাম আছে। যেমন ঝাড়খণ্ডে একে ফাগুয়া বলা হয়। গোয়াতে একে বলা হয় উক্কুলি। আবার গুজরাতে এই উৎসব ধুলেটি নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গে এই উৎসব দোলযাত্রা নামে পরিচিত।
ভারতের বাইরে ইউরোপ ও আমেরিকাতেও হোলি পালিত হয়। বর্তমানে ফুলের পাপড়ি দিয়ে তৈরি জৈব আবির হোলিতে ব্যবহৃত হয়।