গণেশের হাতে বাঁশের তৈরি নানা সামগ্রীর কদর এখন তুঙ্গে। এমনকী সেই সব সামগ্রীর বিক্রিতেই সংসার চালাচ্ছেন এই ব্যক্তি। এককথায় তিনি একজন বাঁশ শিল্পী। হাতে কলমে এই কাজ তিনি কারও কাজ থেকে শেখেননি। কেবল মনের জোরে নতুন কিছু করার তাগিদে পড়াশোনার পাট চুকিয়েই একাজে নেমে পড়েন গণেশ।
advertisement
আজ তাঁর হাতের কাজ দেখলে তাক লেগে যাবে সকলের। অসাধারণ নৈপুণ্যতায় ছোট ছোট বাঁশের টুকরো দিয়ে গণেশ বানিয়েছেন নবনির্মিত সংসদ ভবন, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, হাতে টানা রিকশা, আগ্রা ফোর্ট, তাজমহল, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, চন্দননগর ডুপ্লেক্স মিউজিয়াম, ব্যান্ডেল চার্চ,মক্কা মসজিদ, রেল ইঞ্জিন, টাইটানিক জাহাজ, আইফেল টাওয়ার, কলকাতার ট্রাম, হাওড়া ব্রিজ, দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির, কালীঘাটের কালী মন্দির, লালকেল্লা, ডাবল ডেকার বাস।
এত কাজের মধ্যে তাঁর সেরার সেরা কাজ ‘রেল গাড়ি’ বানানো। প্রায় ২৩ রকম ইঞ্জিন তিনি বানিয়েছেন। সম্প্রতি বালুরঘাটের এক রেস্তোরাঁয় একটি ট্রেনের রেপ্লিকার অর্ডার পেয়েছেন। এই রেলগাড়িটি চলবে এবং সেটি ব্যবহৃত হবে খাবার সার্ভের কাছে। খরচ পড়ছে ৭০ হাজার টাকা। কাজও চলছে জোরকদমে। গণেশের আক্ষেপ, বাঁশ শিল্প প্রায় অবলুপ্তির পথে।
কয়েকজন এখনও কাজ করে যাচ্ছেন। তিনিও সেই পথের পথিক। এটা ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের মধ্যে পড়ে। কিন্তু সেভাবে সরকারের সাহায্য তাঁরা পাচ্ছেন কোথায়! শত প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। ২০ বছর আগে শুরু ২৫০ টাকা পুঁজি নিয়ে। প্রথম বিক্রি ছিল বাঁশের তৈরি চায়ের কাপ।
দেখতে দেখতে ২০টা বছর পার হয়ে গেল। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে গণেশের পরিবার। দু’চোখে স্বপ্ন আরও নতুন কিছু করার, যেখান থেকে সবাই তাঁকে আরও চিনবে। বিশেষ করে রেল ইঞ্জিনের প্রতি ভীষণ দুর্বলতা তাঁর। গণেশের ইচ্ছে, তিনি নিজে একটি সংগ্রহশালা তৈরি করবেন।
যেখানে ১৮৫৩ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারতীয় রেলের সমস্ত ইঞ্জিনের রেপ্লিকা থাকবে। তিনি সারা দেশে বিভিন্ন রেল ইঞ্জিন কারখানা ঘুরে দেখেছেন। গণেশ বলেন, “এখনও অবধি প্রায় শ’খানেকের ওপর রেল ইঞ্জিন পরিবর্তিত হয়েছে। আমি প্রত্যেকটির রেপ্লিকা বানাতে চাই। ছবি আমি পেয়ে যাব গুগুল সার্চ করে। রেল থেকে যদি আগ্রহ দেখায় তাহলে আমি প্রস্তুত।’’
রাহী হালদার