বীরভূমের এই যে পরীক্ষার্থীর কথা বলা হচ্ছে সে হয়তো আহামরি কিছু ফলাফল করেনি। তবে সে যেভাবে পরিশ্রম করে, সমস্ত প্রতিকূলতাকে দূরে সরিয়ে পরীক্ষায় পাশ করতে সক্ষম হয়েছে সেটাই সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠা প্রয়োজন। যে পরীক্ষার্থীর কথা বলা হচ্ছে সে হল বীরভূমের সিউড়ি এক নম্বর ব্লকের অন্তর্গত কড়িধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের দেবাশীষ দাস। সে কড়িধ্যা যদুরায় মেমোরিয়াল এন্ড পাবলিক ইনস্টিটিউশনের ছাত্র। কেন দেবাশীষ দাসের জীবন সংগ্রাম আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠা দরকার?
advertisement
আরও পড়ুন: উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে তৃতীয় চন্দননগরের সোহম, ভবিষ্যতে কী হতে চায় সে?
কারণ দেবাশীষ দাসের বাবা-মা কেউ নেই। বাবা মা না থাকার ফলে তাকে দিদার কাছে মানুষ হতে হচ্ছে। দিদাও এখন থুড়থুড়ে বুড়ি। বাড়িতে কাজের মত আর কেউ নেই। এমন পরিস্থিতিতে দেশে লকডাউন জারি হওয়ার পর দেবাশীষকে ধরতে হয় সংসারের হাল। সে মাছ বিক্রি করা শুরু করে। শুধু মাছ বিক্রি করা নয়, পাশাপাশি ক্যাটারিং সহ অন্যান্য কোন কাজের সন্ধান পেলে বাড়তি রোজগারের তাগিদে ছুটে যেত সে। এই করতে করতে একসময় তার পড়াশোনা লাটে উঠে যায়। পরে স্কুল খুললে দেখা যায় অন্যান্য পড়ুয়ারা স্কুলে এলেও দেবাশীষ নেই।
স্কুলের শিক্ষকরা তার বাড়ি গিয়ে জানতে পারেন দেবাশীষ মাছ বিক্রি সহ অন্যান্য পেশার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন সংসার চালানোর তাগিদে। তবে শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাকে বোঝান এবং স্কুলে ফেরাতে সক্ষম হন। স্কুলে ফিরে এলেও সংসারের হাল ধরার তাগিদে দেবাশীষ মাছ বিক্রি করা ছাড়তে পারেনি। মাছ বিক্রি করেই সে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় এবং শুক্রবার যখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় তখন দেখা যায় দেবাশীষ ভালভাবেই পাশ করেছে। দেবাশীষের প্রাপ্ত নম্বর ৩৯৪। বাংলায় সে পেয়েছে ৭১, ইংরেজিতে ৮০, ভূগোলে ৫৪, ইতিহাসে ৪৮, সংস্কৃতে ৬২ এবং এডুকেশনে ৫৮। তার এই ফলাফল প্রথম দশে থাকা পরীক্ষার্থীদের তুলনায় অনেক কম হলেও যে ভাবে পরিশ্রম করে দেবাশীষ আজ এই পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে তাই এখন সবার কাছে গর্বের।