স্কুলের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার তো বটেই, জেলার সম্ভাব্য মেধা তালিকাতেও ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছেন মৌমিতা। মৌমিতা বলেন, “পরিবার, শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় এই ফল হয়েছে। আগামী দিনে বাংলা বিষয় নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়াশোনা এবং গবেষণা করে ভবিষ্যতে অধ্যাপনার ইচ্ছা আছে।”
আরও দেখুন
advertisement
তবে মেয়ের এই অসাধারণ ফলের পরেও ভবিষ্যৎ পড়াশোনা নিয়ে চিন্তায় বাবা৷ কালীপুর রেশম শিল্প সমবায় সমিতির অধীনে তসরের কাপড় বোনেন সুকুমার কুন্ডু। সমিতি থেকেই সরবরাহ করা হয় সুতো, আর দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে সেই সুতো দিয়ে কাপড় বোনেন সুকুমার। মাসের শেষে রোজগার মেরেকেটে ৪০০০-৪৫০০ টাকা।
আরও পড়ুন – Ahmedabad Weather Update: আজকেও কি আবহাওয়ার তুলকালাম, আইপিএল ফাইনালের ওয়েদার আপডেট
তাতেই সংসার চালানোর পাশাপাশি ভাবতে হয় মেয়ের পড়াশোনার কথা। এই ফলাফল যে তাঁর ভবিষ্যতে উচ্চতর শিক্ষার পথে বিশেষ সহায়ক হয়ে উঠবে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু মেয়ের ফলাফল দেখে যুগপৎ আনন্দিত ও আশঙ্কিত বাবা। ভবিষ্যতে এই স্বল্প রোজগারে বাইরের কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়ের পড়াশোনার খরচ কীভাবে চালাবেন তা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ তাঁর কপালে। তিনি জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বাড়ির কাছের স্কুলে মেয়ের পড়াশোনা কোনওরকমে চালানো গেছে। বইপত্রের বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা। বই মিলেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফ থেকেও।
রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও বৃত্তি থেকে প্রাপ্ত অর্থ এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও পেয়েছেন মৌমিতা। সুকুমার আরও জানান, বাড়ির সামনেই একজন মাত্র গৃহশিক্ষকের কাছে সবক’টি বিষয়েরই টিউশন নিতেন মৌমিতা। সেই বাবদ মাসে খরচ হত মোটে ৪০০ টাকা। কিন্তু এর পর তো তা হবে না, আর আশঙ্কার জন্মও সেখান থেকেই। সুকুমার বলেন, “কলেজ স্তরে যদি বেশ কিছু বই কিনতে হয় বা একাধিক গৃহশিক্ষকের সাহায্য নিতে হয়, সেক্ষেত্রে সেই অর্থের যোগান কোথা থেকে দেব জানি না। আশা করি, মেয়ের এই ফলাফল দেখে তাঁর ভবিষ্যত পড়াশোনার জন্য নিশ্চয়ই সরকারি ও বেসরকারি স্তরে আর্থিক সহযোগিতা পাব।”
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যামিনী কান্ত সাহা বলেন, “মৌমিতার প্রয়োজনে আমরা আগেও পাশে থেকেছি, ভবিষ্যতেও থাকব। আমাদের মতো গ্রামীণ বিদ্যালয়ে আগত পড়ুয়াদের অধিকাংশই আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবার থেকেই আসে। মৌমিতার এই ফলাফল তাদের কাছে উদাহরণ স্বরূপ। আমরা ওর সার্বিক শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি।”
Subhadip Pal