Explained| Corona 3rd Wave|| ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত লক্ষাধিক! করোনা ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ কি আছড়ে পড়ল? কী বলছেন চিকিৎসকরা?
- Published by:Shubhagata Dey
Last Updated:
Has the third wave of coronavirus finally arrived: অধিকাংশ মানুষই নতুন ভ্যারিয়ান্ট, করোনার তৃতীয় ঢেউ এবং অন্যান্য অনেক বিষয় নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছেন।
#নয়াদিল্লি: সম্প্রতি সারা বিশ্ব জুড়েই কোভিডের নতুন ভ্যারিয়ান্ট ওমিক্রনে (Omicron) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন এই স্ট্রেইনটির এত দ্রুত হারে সংক্রমিত হওয়ার চরিত্র কপালে ভাঁজ ফেলতে শুরু করেছে চিকিৎসক মহল থেকে শুরু করে বিজ্ঞানীদের। অন্য দিকে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশ বিশেষ করে পশ্চিমের দেশগুলিতে ওমিক্রনের প্রভাব শুরু হয়ে গিয়েছে।
সারা পৃথিবী জুড়েই স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বার বার সাধারণ জনগণকে মাস্ক পরা, স্যানিটাইজারের ব্যবহার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organization) তরফে এই দিন জানানো হয়েছে যে, এই নতুন কোভিড ভ্যারিয়ান্টটি সাধারণ জনগণের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে চলেছে। কেন না, যেরকম দ্রুত হারে ওমিক্রনের প্রসার ঘটছে, সেটি যে কোনও দেশের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরিষেবা বিঘ্নিত করতে সক্ষম।
advertisement
এই ধরনের মহামারীর পরিস্থিতির মধ্যে, একদল চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীরা ওমিক্রনের বৈশিষ্ট্যকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং এর যে কোনও নতুন মিউটেশনের ওপর সক্রিয় নজর রাখছেন। এই নতুন কোভিড ভ্যারিয়ান্ট ওমিক্রনের সঙ্গে যুক্ত প্রায় সমস্ত ধরনের উপসর্গই আগের ভ্যারিয়ান্টগুলির মতো সক্রিয় রয়েছে। তাই পজিটিভ কোনও ব্যক্তির শরীরে এই নতুন ভ্যারিয়ান্টের খোঁজ পাওয়া একটু কঠিন। এই অবস্থায় অধিকাংশ মানুষই নতুন ভ্যারিয়ান্ট, করোনার তৃতীয় ঢেউ এবং অন্যান্য অনেক বিষয় নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছেন। যে প্রশ্নগুলি বর্তমানে আমাদের অধিক ভাবাচ্ছে সেই নিয়েই আজকের আলোচনা।
advertisement
advertisement
আরও পড়ুন: করোনার IHU ভ্যারিয়ান্ট কী? কতটা মারাত্মক হতে পারে প্রভাব? জানুন বিশেষজ্ঞদের মত...
দেখে নেওয়া যাক কোভিড সংক্রান্ত কোন কোন প্রশ্নের উত্তর আমাদের জেনে রাখা ভালো!
কোভিডের তৃতীয় তরঙ্গ কি ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছে?
বড়দিন এবং নববর্ষ উদযাপনের পরে, ভারতে গত মঙ্গলবার মোট কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৫৮ হাজারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এই পরিসংখ্যান মহামারী শুরুর পর থেকে বৃদ্ধির সময়কালের সর্বোচ্চ রেকর্ড হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কয়েক মাসের অবকাশের পরে, কোভিডের বিকল্প আরও একটি নতুন ভ্যারিয়ান্টের উত্থান এবং কোভিড সংক্রান্ত বেশির ভাগ বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার দরুন ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যাগুলি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে আরম্ভ করেছে। ইতিমধ্যেই সারা দেশে এক সপ্তাহে সংক্রমণের হার বেড়ে হয়েছে প্রায় ছয়গুণ। বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা আর কিছু করতে না পারলেও, শেষ পর্যন্ত বলতেই হচ্ছে যে করোনা ভাইরাসের তৃতীয় তরঙ্গ চলে এসেছে।
advertisement
আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় ফের চ্যালেঞ্জ, নয়া ভ্যারিয়ান্ট Flurona নিয়ে কী জানা যাচ্ছে?
সারাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি:
গত আট দিনে কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে আক্রান্তের সংখ্যা ধারাবাহিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিশেষ করে ১ জানুয়ারি থেকে সংখ্যা এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় নয় গুণ। রবিবার আক্রান্তের সর্বোচ্চ সংখ্যা কম হওয়ার পর, অধিক পরিমাণে টেস্টের সুবিধে থাকায় কোভিড কেসের সংখ্যা আবারও বেড়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই মুহূর্তে তথ্য বলছে যে, ১৮ হাজার ৪৬৬টিরও বেশি নিশ্চিত নতুন কেস ধরা পড়েছে মহারাষ্ট্রে। তাই মহারাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য বলে মনে করা হচ্ছে, তার পরেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ- এখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৭৩ এবং নয়াদিল্লি ৫ হাজার ৪৮১টি কেস সহ রয়েছে তৃতীয় স্থানে। কেরল এবং তামিলনাড়ুতে যথাক্রমে ৩ হাজার ৬৪০ এবং ২ হাজার ৭৩১টি নতুন এবং নিশ্চিত কেস ধরা পড়েছে। স্থানের বিচারে এই দু’টি রাজ্য রয়েছে চতুর্থ এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে। শুধু তাই নয়, গত সপ্তাহে ভাইরাসে মৃত্যুর হারও আশঙ্কাজনক ভাবে কিছুটা বেড়েছে। মঙ্গলবার সারা দেশে মোট ১১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পঞ্জাব, বিহার, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড এবং তেলেঙ্গানায় সংক্রমণের ঘটনা আগের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ভারতে গত ২৫ মার্চ, ২০২১-এ প্রায় ৬০ হাজার কেস রেজিস্টার করানো হয়েছিল, যা ছিল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গের সূচনা। দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় সর্বোচ্চ নিশ্চিত হওয়া নতুন কেস ৬ মে ২০২১-এ রেজিস্টার করানো হয়েছিল।
advertisement
আরও পড়ুন: ভারতে আসতে চলেছে কোভিডের সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউ, ভবিষ্যদ্বাণী কেমব্রিজের করোনাভাইরাস ট্র্যাকারের!
তৃতীয় তরঙ্গের চোখ রাঙানি?
বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন (Satyendar Jain) বুধবার স্পষ্টভাবে বলেছেন যে কোভিড-১৯ মহামারীর তৃতীয় তরঙ্গ দেশের রাজধানীতে আঘাত করেছে। প্রেসকে উদ্দেশ্য করে, তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে আজ ১০ হাজার নতুন আক্রান্তের কেস রেকর্ড হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মুম্বই এবং অন্যান্য স্থানের টায়ার ১ এবং টায়ার ২ শহরেরও একই অবস্থা। মুম্বই ইতিমধ্যে ১০ হাজার ৮৬০ জনের সংক্রমণের চিহ্ন অতিক্রম করেছে যার মধ্যে ৮৯ শতাংশ কেসই উপসর্গবিহীন কেস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের যা বক্তব্য, তাতে পরবর্তী সময়ে এই পরিসংখ্যা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। বিষয়টিকে উদ্দেশ্য করে, মুম্বইয়ের মেয়র কিশোরী পেড়নেকর (Kishori Pednekar) বলেছেন যে ভারতের আর্থিক ব্যবস্থার রাজধানী হিসেবে পরিচিত মুম্বই এবারে আক্রান্তের সুনামির ঢেউয়ের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত।
advertisement
এখন কেস এত বাড়ছে কেন?
কোভিডে আক্রান্তের কেস আবার বেড়ে ওঠার জন্য প্রধানত দু'টি কারণ রয়েছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল- বিধিনিষেধ না মেনে চলা এবং ওমিক্রনের আর্বিভাব।
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিনের তৃতীয় শটের আগে কত দিন অপেক্ষা করা উচিত? অনাক্রম্যতাই বা কত দ্রুত কমে আসে?
কোভিড বিধিনিষেধের কড়াকড়ি না থাকা জনগণের চলাচল বাড়িয়েছে, যার ফলে আক্রান্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও, নতুন কোভিড মিউট্যান্ট যা দক্ষিণ আফ্রিকায় আবির্ভূত হয়েছে তাও বড় শহরগুলিতে বর্তমান উত্থানের পিছনে থাকতে পারে। নতুন ভ্যারিয়ান্টটি হালকা সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। তবে উচ্চ সংক্রমণেও সক্ষম বলে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা আরও বিশ্বাস করেন যে ওমিক্রন ডেল্টার (Delta) বিকল্প প্রতিস্থাপন করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী এবং শীঘ্রই একটি প্রভাবশালী কোভিড স্ট্রেনে পরিণত হতে চলেছে।
advertisement
দ্বিগুণ হুমকি!
তাপমাত্রা হ্রাসের ফলে ইনফ্লুয়েঞ্জার আকারে ওমিক্রন শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের হার দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিইয়েছে। আমরা এমনিতেই শীতকালে ফ্লু-এর আক্রমণে জর্জরিত থাকি সেখানে ওমিক্রনের আবির্ভাব দ্বিগুণ সংক্রমণের (কোভিড এবং ফ্লু) ঝুঁকিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। এতে সম্পূর্ণ বিষয়টিকে আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ফ্লু ছাড়াও, দেশে ব্যাপক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সক্রিয়তা, যা দ্বিতীয় কোভিড তরঙ্গের দিকে পরিচালিত হয়েছিল, সেখানে বর্তমানে ডেলমিক্রন (Delmicron) সংক্রমণের (ডেল্টা + ওমিক্রন) ঝুঁকিও রয়েছে। দু'টি মিউট্যান্ট রূপের সংমিশ্রণ ইউরোপীয় দেশটিগুলিকে ইতিমধ্যেই বিপর্যস্ত করতে শুরু করে দিয়েছে। আগামী সপ্তাহে এই সমস্ত কারণের জন্যই পজিটিভ কেস এবং মৃত্যুর হার আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর জন্য সম্ভাব্য সমাধান হল কোভিডের যাবতীয় বিধিনিষেধ মেনে চলা।
view commentsLocation :
First Published :
January 07, 2022 6:46 PM IST