Coronavirus| IHU Variant|| করোনার IHU ভ্যারিয়ান্ট কী? কতটা মারাত্মক হতে পারে প্রভাব? জানুন বিশেষজ্ঞদের মত...
- Published by:Shubhagata Dey
Last Updated:
Why Experts Have Advised Against Panic for IHU Variant: ফ্রান্সের একদল গবেষকদের দাবি, তাঁরা ইতিমধ্যেই করোনার আরও একটি নতুন ভ্যারিয়ান্টের সন্ধান পেয়েছেন।
#নয়াদিল্লি: করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়ান্ট ওমিক্রন (Omicron) নিয়ে সারা বিশ্ব জুড়েই প্রায় হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে। ঠিক যে সময় আমরা আবার আগের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গিয়েছিলাম তখনই করোনার ত্রাস ভাঁজ ফেলে চিকিৎসক থেকে বিজ্ঞানী সব মহলেই। তবে নতুন ভ্যারিয়ান্টের ছড়িয়ে পড়া এবং পরিবর্তিত রূপ নিয়ে আবার ফিরে আসা এই সবই যে কোনও ভাইরাসের সাধারণ চরিত্র। তবে নতুন ভ্যারিয়ান্ট ওমিক্রনের বাড়বাড়ন্তের মধ্যেই করোনার আরও একটি ভ্যারিয়ান্টের দেখা মিলেছে সম্প্রতি। ফ্রান্সের বন্দর শহর মার্সাইলে ইউনিভার্সিটি হসপিটাল ইনস্টিটিউট মেডিটারেনিয়ান ইনফেকশন বা আইএইচইউ-এর (IHU) নামে এই নতুন ভ্যারিয়ান্টটিকে সনাক্ত করা হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বর।
ফ্রান্সের একদল গবেষকদের দাবি, তাঁরা ইতিমধ্যেই করোনার আরও একটি নতুন ভ্যারিয়ান্টের সন্ধান পেয়েছেন। যদিও এখনএ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ১২ জনের শরীরে ওই নতুন ভ্যারিয়ান্টের সাক্ষাৎ মিলেছে, তবে এতেই চিন্তা বাড়ছে বিজ্ঞানীদের। এই ভ্যারিয়ান্টটিকে আইএইচইউ (IHU) বা B.1.640.2 নামে সনাক্ত করা হয়েছে। ফ্রান্স ছাড়া অন্য কোনও দেশে ইতিমধ্যেই না পাওয়া গেলেও গবেষকরা জনসাধারণকে বার বার সতর্ক করে দিয়েছেন।
advertisement
IHU বা B.1.640.2 ভ্যারিয়ান্ট আসলে কী?
advertisement
ফ্রান্সের বন্দর শহর মার্সাইলে ইউনিভার্সিটি হসপিটাল ইনস্টিটিউট মেডিটারেনিয়ান ইনফেকশন বা আইএইচইউ-এর নামে এই নতুন ভ্যারিয়ান্টটিকে সনাক্ত করা হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। প্রাক্তন ভ্যারিয়ান্ট B.1.640-এর থেকে বিবর্তিত হতে হতে অনেকটাই রূপ পরিবর্তন করে নেওয়ায় বর্তমান ভ্যারিয়ান্টটিকে আলাদা নামে অভিহিত করা হয়েছে। তবে ভরসার কথা ফ্রান্স ছাড়া আর কোথাও এখনও পর্যন্ত এই নতুন ভ্যারিয়ান্টের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। ওই ১২ জনের অনেকেই আফিক্রার ক্যামেরুনে যাতায়াত করতেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।
advertisement
আরও পড়ুন: ঝড়ের গতিতে বাড়ছে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা, এখন কি জিমে যাওয়া উচিত? বিশেষজ্ঞদের যা মত...
MedRxiv জার্নালে পূর্বে প্রকাশিত IHU রিসার্চাররা একটি গবেষণা পত্রে বলেছিলেন যে, ৪৬ বার মিউটেশন এবং ৩৭ বার ডিলিটেশনের ফলে ওই ভ্যারিয়ান্টটি ৩০ অ্যামিনো অ্যাসিড সাবস্টিটিউশন এবং ১২ ডিলিটেশনের স্তরে পৌঁছেছে। এই পরিবর্তনের ফলে ভাইরাসের প্রোটিন স্তরে N501Y এবং E484K সহ ১৪ অ্যামিনো অ্যাসিড সাবস্টিটিউশন ঘটেছে। N501Y সহ মিউটেশনের ফলে ওই ভ্যারিয়ান্ট অনেকাংশেই ভাইরাসের স্থানান্তরণে সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং E484K সহ মিউটেশনের ফলে ভাইরাসের ‘রিইনফেকশন’ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এতে ভ্যাকসিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে তাকে অনেকটাই নিরপেক্ষ করে দেয়। ফলে এতে এখনও পর্যন্ত যে কোনও ব্যক্তির নেওয়া ভ্যাকসিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার শক্তি রয়েছে। প্রায় ৩৫০ ধরনের ইনফেকশনের নমুনা এতে যুক্ত রয়েছে। জার্মানি, ইউকে, ইউএস, স্পেন সমস্ত দেশ থেকেই এই ইনফেকশনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, এই তালিকায় রয়েছে ভারতও।
advertisement
এখনও পর্যন্ত ওই ভ্যারিয়ান্টের যা অগ্রগতি দেখা গিয়েছে তাতে, নতুন প্যাঙ্গোলিন লাইনেজ তৈরির সম্ভাবনা থাকছে। একে নতুন স্ট্রেইন B.1.640.2 নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষকদের আরও ধারণা যে প্রতিটি লাইনেজে ২৫ নিউক্লিওটাইড সাবস্টিটিউশন এবং ৩৫ ডিলিটেশনের অন্তর রয়েছে।
কোথায় কোথায় এই নতুন ভ্যারিয়ান্টকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে?
বিজ্ঞানীদের এত সব উদ্বেগ সত্ত্বেও আশার কথা এইটি যে, এখনও পর্যন্ত ফ্রান্সের মাত্র ১২ জনের শরীরে ওই ভ্যারিয়ান্টের সাক্ষাৎ পাওয়া গিয়েছে। যে ১২টি স্যাম্পল পাওয়া গিয়েছে তাদের প্রত্যেকের অবস্থানই ভৌগোলিকগত দিক থেকে এক- সাউদার্ন ফ্রান্স। গবেষণায় এও দেখা মিলেছে যে এক ব্যক্তি সম্প্রতি আফ্রিকার ক্যামেরুন সফর করে ফিরেছেন। তথ্য বলছে, ওই আক্রান্ত ব্যক্তি গত বছরের নভেম্বরেই আক্রান্ত হয়েছেন এবং ব্যক্তির করোনার দু'টি ভ্যাকসিন ডোজই সম্পন্ন হয়েছিল। নতুন স্ট্রেনে আক্রান্ত ওই ব্যক্তির শরীরে সামান্য শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা ছাড়া আর কোনও উপসর্গ দেখা যায়নি।
advertisement
আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় ফের চ্যালেঞ্জ, নয়া ভ্যারিয়ান্ট Flurona নিয়ে কী জানা যাচ্ছে?
অন্য কোনও দেশে ইতিমধ্যেই না পাওয়া গেলেও গবেষকরা জনসাধারণকে সতর্ক করে দিয়েছেন। কেননা B.1.640.2 স্ট্রেইনটি তার পূর্বতন স্ট্রেইন B.1.640 লাইনেজের সঙ্গে সম্পর্কিত। স্ট্রেইন B.1.640 সবার প্রথমে ফ্রান্সে ২০২১ সালে এপ্রিল মাসে সনাক্ত করা হয়। তার পরেই ২০২১ সালের অগাস্টে ইন্দোনেশিয়ায় এবং ২০২১ সালে সেপ্টেম্বরে রিপাবলিক অফ কঙ্গোতে সনাক্ত করা হয়।
advertisement
প্রায় ১৯ দেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত B.1.640 লাইনেজের ৪২০ বার সিকোয়েন্স পরিবর্তিত হয়েছে । প্রায় ৩৫০ ধরনের ইনফেকশনের নমুনা এতে যুক্ত রয়েছে। জার্মানি, ইউকে, ইউএস, স্পেন সমস্ত দেশ থেকেই এই ইনফেকশনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, এই তালিকায় রয়েছে ভারতও।
আরও পড়ুন: ভারতে আসতে চলেছে কোভিডের সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউ, ভবিষ্যদ্বাণী কেমব্রিজের করোনাভাইরাস ট্র্যাকারের!
ওই গবেষণা কেন্দ্রের দাবি, ওই ব্যক্তির শরীরে পাওয়া নতুন স্ট্রেনটি ক্যামেরুন সফরের মাধ্যমে ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে, তবে পূর্বতন স্ট্রেইনের সঙ্গে এর মিল পাওয়া যাচ্ছে না।
advertisement
নতুন স্ট্রেইন নিয়ে চিন্তার কারণ রয়েছে কি?
গবেষকদের বক্তব্য, এখনই এই ১২টি নতুন কেসের স্ট্রেইন নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়। আমাদের আরও কিছু কেস স্টাডি করার পর, স্ট্রেইনটির স্থানান্তরের ক্ষমতা বিচার করা এবং উপসর্গ ও ইনফেকশন স্তর বিচার করার পরই তাঁরা এই বিষয়ে যথোপযুক্ত মতামত দিতে পারবেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organisation) এক এক্সপার্টের মতে, এখনই এই নতুন স্ট্রেইন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি, তবে এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলাও যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিনের তৃতীয় শটের আগে কত দিন অপেক্ষা করা উচিত? অনাক্রম্যতাই বা কত দ্রুত কমে আসে?
আরও এক বিশেষজ্ঞের মতে, যে কোনও ভাইরাসের ক্ষেত্রে বারে বারে মিউটেশন এবং নতুন নতুন স্ট্রেইনের জন্ম নেওয়া খুবই স্বাভাবিক। এর অর্থ এমনও নয় যে, সবগুলো স্ট্রেইনই মারাত্মক আকার নেবে। তিনি আরও বলেছেন যে, কোনও ভাইরাসকে আমরা তখনই মারাত্মক বলতে পারবো যখন কোনও ভাইরাস অতি দ্রুত নিজেকে মিউটেন্ট করে এবং পূর্বতন ভাইরাসের সঙ্গে আরও দূরত্ব তৈরি করে। এখন দেখার বিষয় নতুন স্ট্রেইনটিকে কোন ধরনের ক্যাটাগরিতে ফেলা হচ্ছে।
ফেইগাল-ডিংয়ের (Feigl-Ding) মতে, B.1.640.2 স্ট্রেইনটি ডেল্টা এবং ওমিক্রনের তুলনায় অনেক সহজে এবং শর্টকার্ট পদ্ধতিতে সনাক্ত করা সম্ভব। আরটি-পিসিআর টেস্টের মাধ্যেই এই নতুন স্ট্রেন সনাক্ত করা সম্ভব।
আইএইচইউ-র গবেষকদের মতে, নিয়মিত নতুন স্ট্রেইনটির ইনভেসটিগেট করা এবং নতুন কোনও ভ্যারিয়ান্ট জন্ম নিচ্ছে কি না সেই বিষয়ে নজর রাখতে হবে। ওমিক্রনের মাত্রা ছাড়া সংক্রমনের মধ্যে আইএইচইউ-এর আগমন নিঃসন্দেহে আমাদের কাছে চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। বিগত দু’বছরের করোনার আবহে জনজীবন এমনিতেই অনেকটা বিপর্যস্ত। তাই এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সচেতন নাগরিক হিসেবে সচেতন থাকাই আমাদের জন্য সুরক্ষা বহন করে আনবে।
view commentsLocation :
First Published :
January 06, 2022 6:33 PM IST

