পুজোর নৈবিদ্যে মঠ, খেলনা, কদমা, বাতাসা নিবেদন করে বাঙালি। প্রতিটি জিনিসই চিনি থেকে তৈরি হয়। এর মধ্যে কদমা কালীপুজোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। বলা হয়, দেবী কালিকার হাতে কদমা না দিলে নাকি মায়ের পুজো অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বাংলার নানা প্রান্তে প্রসিদ্ধ কালী প্রতিমাদের হাতে বিশালাকৃতির কদমা দেখা যায়। যেমন বোল্লাকালী, ইন্দ্রগাছার বামাকালী, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার জলঘরের ত্রিকুল কালীর হাতে কদমা দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। মানকর গ্রামেও মহা ধুমধামে কালিপুজোর আয়োজন হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। প্রায় ১৫০ বছর আগে এখানে মা কালীর পুজোর ভোগ একটি সারমেয় খেয়ে ফেলায় খুব অল্প সময়ে চিনির রস ও ছানার জল দিয়ে প্রথম এই মিষ্টি তৈরি করেছিলেন গ্রামের এক ময়রা।
advertisement
আরও পড়ুন : কালী পুজোয় রাস্তায় বেরিয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, পিষে দিল বাস! আর দেওয়া হল না মাধ্যমিক পরীক্ষা, মৃত্যু ছাত্রীর
কদম ফুলের মত দেখতে হওয়ায় এর নামকরণ করা হয় কদমা। এই কদমা তৈরির প্রধান উপকরণ হল চিনি, জল এবং সামান্য ছানার জল। প্রয়োজন মতো জলে চিনি ফুটিয়ে সামান্য পরিমাণে ছানার জল দেওয়া হয়। ঠিক মতো পাকে এলে তা নামিয়ে ধার উঁচু কাঠের পাটায় ঢালা হয়। হালকা জমে এলে গরম থাকা অবস্থায় পাটা থেকে তুলে মণ্ডটিকে একটি ঝোলানো আঁকশিতে আটকে ঝুলিয়ে লম্বা করা হয়। শেষ প্রান্তটি আবার আঁকশিতে আটকে টেনে লম্বা করা হয়। এভাবে বার বার টেনে সেটি একসময় সাদা এবং ফাঁপা হয়ে যায়। প্রচণ্ড পরিশ্রম হয় কদমা তৈরিতে। একটা সময় পর পাটার ওপর চিনির গুড়ো ছিটিয়ে হাতে করে টেনে টেনে বার বার ভাঁজ করতে হয়।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
যত বেশি টানা হবে, কদমা ততই হালকা এবং মানসমৃদ্ধ হবে। কদমার ওপর তত বেশি শির তৈরি হবে। মান সমৃদ্ধ একটি বড়ো কদমায় প্রায় ১০০৮ টি শির থাকতে হয়। কদমা বিভিন্ন আকারের হয়। দেবতার কাছে মানত করা এক-দু কেজি থেকে ১৫-২০ কেজি পর্যন্ত বিশেষ কদমাও তৈরি হয়। কালী পুজোয় মানকরের এই বিখ্যাত কদমার ব্যাপক চাহিদা থাকে। জানা যায় মানকর গ্রামে ছোট বড় মিলে প্রায় ১৩৮ টি কালি পুজো হয়। আর কালী পুজোয় মা কালীকে কদমা দিতেই হবে। তাই কদমা প্রস্তুতকারীদের কাছে ভালই বরাত এসেছে এবার।এই কদমা মানকরবাসীর গর্ব।