বর্ধমানের সোনাপলাশী গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। এই গ্রামে তাঁদের প্রায় আধ কাটা জমি আছে। নয়-নয় করে প্রায় ৪০০ বছরেরও অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও ওই জায়গায় কিছুতেই চাষবাস করা যায়নি। অথচ চেষ্টার কসুর করেননি বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের পুর্বপুরুষ থেকে শুরু করে বর্তমান পুরুষদের কেউ কেউ। কথিত আছে, ওই জায়গাটি অভিশপ্ত। কারণ একসময় ওই স্থানে সতীদাহ করা হয়েছিল।
advertisement
এই বিষয়ে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের বর্তমান বংশধর জ্যোতিপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে তিনি শুনেছেন তাঁদের পরিবারে ওই জায়গাটি সতীডাঙা বা সতীঝিল হিসেবে প্রচলিত। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, তাঁদের পুর্বপুরুষ কনৌজ থেকে এই গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেছিলেন। সেই সময় সতীদাহ প্রথা চালু হয়েছিল। এই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারেরই দুই সতীকে ওই জায়গায় দাহ করা হয়েছিল। তারপর থেকেই ওই জায়গাটি সতীডাঙা বা সতীঝিল বলে পরিবারে প্রচলন রয়েছে।
আগে ওই স্থান ঘন জঙ্গলে ঘেরা ছিল। গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে অবস্থিত এই জায়গায় সাধারণ মানুষ আসতেই ভয় পেতেন। এমনকি এখনও রাতের দিকে ওই জায়গায় যেতে চান না অনেকেই। ওই জায়গার ‘অভিশপ্ত’ তকমাকে ঘোচাতে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের পূর্বপুরুষরা একাধিকবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু যতবারই চাষ করা হয়েছে, ততবারই অজানা কারণে সেই গাছ শুকিয়ে মরে গিয়েছে। ধান চাষ করা হলে সেটাও অজানা কারণে শুকিয়ে মরে যায়। অথচ এই জায়গার পাশের জায়গাতেই সোনার ধান ফলছে। কোনও সমস্যা হয়নি।
সম্প্রতি জ্যোতিপ্রকাশবাবু এই সোনাপলাশী গ্রামের অজানা ইতিহাসকে তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছেন। একটি বই প্রকাশের ইচ্ছে রয়েছে। সেই কারণে তিনি গ্রামের অন্ধিসন্ধির তত্ত্বতালাশ করে চলেছেন। সেই সূত্রেই তিনি তাঁর পরিবারের অজানা কথা জানতে পারেন। ইতিহাস অনুসন্ধানের পাশাপাশি এর পিছনে লুকিয়ে থাকা বৈজ্ঞানিক কারণও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
বর্ধমানের বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ড. সর্বজিত যশ জানিয়েছেন, ১৮২৯ সালে সতীদাহ রদ হয়। বর্ধমান জেলা জুড়ে একাধিক জায়গায় সেই সময় সতীদাহ হত। খোদ বর্ধমান শহরেই রয়েছে নয়-নয় করে চারটি সতীদাহের জায়গা। এর মধ্যে কয়েকটি মন্দির এখনও টিকে রয়েছে। ১৮২৯ সালে সতীদাহ রদ হলেও বর্ধমানের একটি সতীদাহের জায়গায় ১৮৮০ সালেও সতীদাহ হয়েছিল।





