৭১ সালের সেই দিনগুলো আজও স্পষ্ট হয়ে ভেসে ওঠে দক্ষিণ বেরুবাড়ির সারদাপ্রসাদ রায়ের চোখে। বয়স আশির কোঠায়, কিন্তু কণ্ঠে এখনও ঝাঁঝ– যুদ্ধের ঝাঁঝ! স্মৃতির পাতায় ফিরে গিয়ে তিনি বলেন, “১৯৬২ সালেই বুঝেছিলাম, আমাদের এই অংশটি পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। সেই থেকেই বেরুবাড়িকে পাকিস্তানের অংশ হতে দেওয়ার বিরোধিতায় গড়ে তুলেছিলেন বেরুবাড়ি আন্দোলন। সেই বেরুবাড়ি আন্দোলনের মাটি থেকেই প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল।’
advertisement
আরও পড়ুন: পাকিস্তানকে বিশ্বাস নেই! ভারতীয় সেনার সহযোগিতায় বাংলাদেশ সীমান্তে রেলের বড় উদ্যোগ, কী হবে এবার?
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭১-এর সেই দিনগুলো, যখন পাকিস্তানকে লক্ষ করে ভারতীয় সেনার মুহূর্মুহূ আক্রমণে কেঁপে উঠত বেরুবাড়ির সীমান্ত। একদিকে কামানের গোলা, গুলির শব্দ, বুটের আওয়াজ থেকে কামানের গোলার ধোঁয়ায় আকাশ কালো হয়ে থাকত বেরুবাড়ির।বেরুবাড়িকে ভারতের জমি হিসেবে রেখে দিতে সার্থক হয়েছিলেন সারদাপ্রসাদ-সহ অন্যান্য-সহ যোদ্ধারা। তারপর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আজও স্মৃতিতে উঁকি দেয়।’
সারদাপ্রসাদ জানান, ‘ভারত তখন এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের নির্যাতিত মানুষদের। সেই সময় সারদাপ্রসাদ ছিলেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের এক সক্রিয় সদস্য। ভারতীয় সেনার জন্য গোলাবারুদ থেকে খাবার– সব পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছেন তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা।’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনারা যেভাবে মা-বোনেদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে, তা আজও চোখে ভাসে। ভারতীয় সৈনিকেরা যেভাবে বুক চিতিয়ে লড়েছে– সে তো গর্বের কথা।’ এই বয়সেও যদি যুদ্ধ ডাক আসে, সারদাপ্রসাদ জানিয়ে দেন, তিনি প্রস্তুত। “দেশকে যদি প্রয়োজন হয়, আবার পথে নামতে এক মিনিট দেরি করব না।” স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মকথায় দক্ষিণ বেরুবাড়ির অবদান আজ হয়তো ইতিহাসের পাতায় ছোট জায়গা নিয়েছে, কিন্তু সারদাপ্রসাদদের মতো মানুষদের মনে তা গাঁথা রয়েছে সোনার অক্ষরে। আজও যখন সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ে, সারদাপ্রসাদ চুপিচুপি তাকান আকাশের দিকে। চোখে ভেসে ওঠে সেই দিনের রাইফেল, সেই গর্জে ওঠা যুদ্ধ, মনে নয়– চোখে ভেসে উঠছে সেই দিনগুলি।
সুরজিৎ দে





