অভিযোগ, শোকার্ত পরিবার গুলির নজর এড়িয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের মর্গে, অদলবদল হয়ে যায় দুটি মৃতদেহ। প্রথমে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে জেলার কুমারগ্রাম ব্লকের কামাখ্যাগুড়ি সুপার মার্কেট এলাকায়। কারণ ওই এলাকার বাসিন্দা পেশায় হোটেল কর্মী রবীন্দ্র দাসের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় শামুকতলা থানার তেঁতুল তলার একটি ধাবা থেকে। ওই ধাবাতেই কাজ করতেন রবীন্দ্র দাস।
advertisement
শনিবার সকালে ওই মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। কিন্তু ময়নাতদন্তের পর তাঁর মৃতদেহ যখন কামাখ্যাগুড়ির বাড়িতে পৌঁছোয় তখনই হইচই শুরু হয়ে যায়। পরিবার দাবি করে, মৃতদেহটি রবীন্দ্র দাসের নয়। অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই মহা ফাঁপড়ে পড়ে পুলিশ। অন্যদিকে শনিবার সকালে ফালাকাটা শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজেপাড়াতে নিজের রান্নাঘর থেকে স্থানীয় বাসিন্দা গণেশ দাসের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে পাঠায় ফালাকাটা থানার পুলিশ।
গণেশের মৃতদেহের সঙ্গে যান তাঁর ভাই ও আরও দুই নিকটাত্মীয়। কিছুদিন আগে গনেশের স্ত্রী মারা যাওয়াতে তাঁর তেমন কেউ নেই। দুই শিশু সন্তান সরকারি হোমে থাকে। তিনি দিনমজুর খেটে পেট চালাতেন। ময়নাতদন্তের পর সঙ্গে লোকজন বেশি না থাকায়, ওই মৃতদেহ ফালাকাটায় না ফিরিয়ে আলিপুরদুয়ার শ্মশানে দাহ করে ফালাকাটার বাড়িতে ফিরে আসেন গনেশের ভাই কার্তিক দাস। তাতেই জটিলতা তুঙ্গে ওঠে। যদিও পরিবার আপত্তি তোলায় পুলিশ অনেক বুঝিয়ে রবীন্দ্র দাসের বাড়ি থেকে মৃতদেহটি আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের মর্গে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। কিন্তু বাস্তবে ততক্ষণে গনেশ দাস ভেবে রবীন্দ্র দাসের মৃতদেহ তো নজর এড়িয়ে দাহ করা হয়ে গিয়েছে।
এবার তাঁর মৃতদেহ ফেরানো পুলিশের পক্ষে আর ফেরানো সম্ভব নয়, তা উপলব্ধি করতে পেরে প্রমাদ গুণতে শুরু করেন জেলার পুলিশ কর্তারা। রবীন্দ্র দাসের ছেলে খোকন দাস অভিযোগ করেন, “এখন তো মনে হচ্ছে আমার বাবাকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করে তথ্য প্রমাণ লোপাট করতে তাঁর মৃতদেহ গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। ইচ্ছাকৃত ভাবে মৃতদেহ বদল করা হয়েছে। আমরা বাবার মৃতদেহ যে-কোনো মূল্যে ফেরত চাই।”
অন্যদিকে গনেশ দাসের ভাই কার্তিক দাস বলেন “এমনিতেই মানসিক অবস্থা ঠিক ছিল না। আমাদের লোকবল নেই। তাই আমরা মৃতদেহটি কোনোক্রমে আলিপুরদুয়ারের শোভাগঞ্জের শ্মশানে দাহ করে চলে এসেছি। সেটি যে দাদার মৃতদেহ ছিল না, তা আমরা বুঝিনি। মর্গ থেকে যা আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমরা সেই ভাবে মৃতদেহের শেষ কাজ করেছি”। জেলা হাসপাতালের সুপার পরিতোষ মন্ডল বলেন, “এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে অবশ্যই তদন্ত করা হবে।”






