শিয়রে এখন পঞ্চায়েত ভোট, অথচ বসিরহাটের সীমান্ত থেকে সুন্দরবনের দশটি ব্লকে যেন বিজেপির প্রচার বা প্রার্থী মনোনয়নে ভাটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বরং বাম এবং কংগ্রেসের একটি অলিখিত যে জোট তৈরি হয়েছে সেই জোট যথেষ্টই ভাবাচ্ছে শাসকদলকে। ইতিমধ্যে হিঙ্গলগঞ্জ, মিনাখাঁ, হাসনাবাদ, বাদুড়িয়া ও স্বরূপনগর সহ বিভিন্ন ব্লকে শাসকদলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে সিপিআইএম। একাধিক জায়গায় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। মাথা ফেটেছে অনেক সিপিআইএম কর্মীর, আহত হয়েছেন বেশ কিছু তৃণমূল কর্মীও। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিজেপির তুলনায় বেশি সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়ন করেছে সিপিআইএম। পাশাপাশি তাদের প্রচার যথেষ্টই জোরালো হচ্ছে।
advertisement
তাই সে কথা এক প্রকার স্বীকার করে নিলেন শাসক দলের উত্তর ২৪ পরগণা জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি তথা স্বরূপনগরের বিধায়িকা বিনা মণ্ডল। তিনি অকপটে স্বীকার করে নেন প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে পঞ্চায়েত ভোটে তারা সিপি ইএমকেই দেখতে পাচ্ছেন। যদিও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বসিরহাটের সিপিআইএম নেতা বিশ্বজিৎ বোস বলেন, “মানুষ বুঝতে পেরেছে যে তৃণমূল ও বিজেপি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাই তারা বিজেপিকে বরখাস্ত করেছে। পুনরায় বাম কংগ্রেসের দিকেই তারা ঝুকতে চাইছে।”
আরও পড়ুন: হাতে আম নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন প্রার্থী! সহায় বাম-কংগ্রেস! কারণ অবাক করবে
যদিও বিষয়টিকে মানতে নারাজ বিজেপির নেতা বিবেক সরকার। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জানেন রাজ্যে প্রধান বিরোধী শক্তি বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারী বলিষ্ঠ ভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা অংশগ্রহণ করছেন। তা সত্ত্বেও শাসক দল যদি বিজেপিকে দেখতে না পান সেটা আমাদের দুর্ভাগ্য না তাদের দুর্ভাগ্য। তৃণমূল যাদেরকে প্রধান বিরোধী হিসাবে দেখতে পাচ্ছে, তারা তৃণমূলের ঘরের লোক হয়ে গেছে।” পাশাপাশি তিনি সিপি ইএমকেও কটাক্ষ করে বলেন, “কেউ যদি মনে করে আমরা এবং শাসক দল একই কয়েনের এপিঠ-ওপিঠ সেটা সিপিআইএমের ব্যর্থতা, আমাদের নয়।” বিজেপি নেতা যতই মুখে নিজেদেরকে প্রধান বিরোধী হিসাবে তুলে আনার চেষ্টা করুন না কেন, বসিরহাটের মানুষ কিন্তু বলছে অন্য কথা।
আরও পড়ুন: অবলা বন্ধুত্ব! আহত গরুকে ছেড়ে গেল না অন্য গরু! চোখে জল আনবে ভিডিও
তারা বলছেন, ২০১৯ এর লোকসভা বা ২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে যেভাবে বিজেপির একটি হাওয়া উঠেছিল তা এখন অনেকটাই ম্লান হয়েছে। বসিরহাটে মানুষ পুনরায় বাম-কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। বাস্তবেও সেই চিত্র উঠে আসছে। যেখানে দেখা গিয়েছে মনোনয়নের ক্ষেত্রে বসিরহাটের বাদুড়িয়া, স্বরূপনগর বসিরহাট ১ ও ২, হাড়োয়া ও হাসনাবাদের মত ব্লক গুলিতে বিজেপি থেকে অনেকটাই বেশি প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদেও এক প্রকার বিজেপিকে টেক্কা দিয়ে ও তৃণমূলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মনোনয়ন জমা করেছে সিপিআইএম। যার ফলে কিছুটা হলেও চওড়া হাসি দেখা যাচ্ছে সিপিআইএম নেতা-নেত্রীদের মধ্যে।
শুধুমাত্র মনোনয়ন নয় প্রচারেও অনেকটা এগিয়ে আছে সিপিআইএম। সীমান্ত থেকে সুন্দরবনের গ্রামগুলিতে ইতিমধ্যেই একাধিক মিটিং মিছিল শুরু করে দিয়েছে তারা। পাশাপাশি রাস্তাঘাটেও বিজেপির পতাকা এক প্রকার দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে। তাহলে কি সীমান্ত ও সুন্দরবনে ঘেরা বসিরহাটের মানুষ প্রধান বিরোধী হিসেবে সিপিআইএমকেই দেখতে চাইছে? কি করে ফিঁকে হল বিজেপির মোদি ম্যাজিক? এর জন্য দায়ী কি বিজেপির রাজনীতি নাকি পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্থানীয় সমস্যাই প্রকট হয়ে ওঠে বলে বিজেপির এই হাল? সেই প্রশ্নের উত্তরই এখন খুঁজছে রাজনৈতিক মহল।
জুলফিকার মোল্যা





