লকডাউনের বাধ্যতামূলক ঘরবন্দি সময়টাই হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের মোড় ঘোরানোর সময়। সেই সময় থেকেই নিজের হাতে কেক তৈরি করা শুরু করেন তিনি। প্রথমে সীমিত পরিসরে হলেও ধীরে ধীরে কেক তৈরির কাজের প্রতি তাঁর আগ্রহ ও দক্ষতা বাড়তে থাকে। নিজের তৈরি কেকের ছবি ও ভিডিও তিনি নিয়মিতভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করতে শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই মানুষের ভালবাসা ও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তাঁকে আরও উৎসাহিত করে। সেই উৎসাহই কবিতাকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে এবং ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে তাঁর নিজস্ব ব্র্যান্ডের কেক তৈরির সংস্থা। আজ সেই সংস্থা পরিচিতি পেয়েছে অনলাইন ও অফলাইন দু’জায়গাতেই।
advertisement
আরও পড়ুন: কেক মোয়ার ‘কম্বো’, এবছর বড়দিনের বাজারে সুপারহিট! স্বাদ নিতে দোকানে মৌমাছির মত ভিড় করছে লোকে
কবিতা এই প্রসঙ্গে বলেন, “এক দম শূন্য থেকে শুরু করে ছিলাম। বাবা চাইলেও তখন আর্থিক ভাবে সাহায্য করতে পারেনি। আজ যে টুকু দেখছেন এই ঘরে, পুরোটাই বিজনেসের উপর দিয়ে। আমাকে রাজ্য সরকার সাহায্য করলে আরও বড়ো করে চিন্তাভাবনা করতাম, আরও মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারতাম। নিজের চেষ্টাতেই এগিয়ে চলেছি।” শুধু নিজে ব্যবসা করেই থেমে থাকেননি কবিতা। নিজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি শুরু করেছেন কেক তৈরির প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। অফলাইন ও অনলাইন দু’ভাবেই বহু ছাত্রছাত্রী তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এর ফলে শুধু তাঁর নিজের রোজগারই বাড়েনি, পাশাপাশি কয়েকজনের জন্য তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ।
কবিতা জানান, লকডাউনের সময় মানুষের দুর্দশা এবং বাবার কাজ চলে যাওয়ার ঘটনাই তাঁকে জীবনে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। সেই সময় বুঝেছিলেন, অন্যের ওপর নির্ভর না করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোই একমাত্র পথ। তিনি আরও বলেন, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যদি কিছুটা সহযোগিতা ও সহায়তা পাওয়া যায়, তাহলে আগামী দিনে তাঁর সংস্থার মাধ্যমে আরও অনেক মানুষের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব। কবিতার এক স্টুডেন্ট দেবশ্রী মণ্ডল বলেন,”আমার খুব ভাল লাগছে, কারন আমি নিজে কিছু একটা করতে পেরেছি। সবাই কেক খেয়ে যখন বলে ভাল হয়েছে, তখন খুব ভাল লাগে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
তার সঙ্গে ইনকামও করতে পারছি। কবিতার কাছেই আমি সবটা শিখেছি।” এই মুহূর্তে নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই কবিতার। তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়া ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা সকলেই ব্যস্ত কেক তৈরির কাজে। উৎসবের মরশুমে অর্ডারের চাপ সামলেও মুখে হাসি কবিতার, কারণ এই ব্যস্ততার মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাঁর সাফল্যের গল্প। ব্যস্ততার মাঝেও কবিতার চোখে ভবিষ্যতের স্বপ্ন, নিজের উদ্যোগকে আরও বড় করে তোলা, আরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং সমাজের আরও অনেক মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। লকডাউনের অন্ধকার সময়ে দাঁড়িয়ে সাহস, পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের যে দৃষ্টান্ত কবিতা পাল তৈরি করেছেন, তা আজ বহু তরুণ-তরুণীর কাছেই অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে উঠেছে।





