উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, গান্ধির ডান্ডি অভিযানের সময় তাঁর গ্রেফতারের প্রতিবাদে মালদহে আদালত ও প্রশাসনিক ভবনগুলি অবরোধ করার কর্মসূচি গ্রহণ করে জাতীয় কংগ্রেস। সালটা ১৯৩০। কংগ্রেস সম্পাদক হিসাবে দেবেন ঝাঁ আইনজীবী, ডাক্তার, শিক্ষক,ছাত্র, সমাজসেবী ছাড়াও এনেছিলেন আদিবাসীদের একটি বিরাট দল ও শতাধিক দশনামী সন্ন্যাসীকে। আই বি রিপোর্ট বলে, ঐ সময়ে লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ ঘটে মালদহ শহরে। তৎকালীন কুখ্যাত দুই প্রশাসক জেলাশাসক কার্টার ও পুলিশ সুপার হিক্সের নেতৃত্বে বিরাট পুলিশবাহিনী তৈরিই ছিলো। কাছারির উত্তরদিকের দরজায় দুই সাহেবের মুখোমুখি দাঁড়ান অকুতোভয় দেবেন ঝাঁ। ঐতিহাসিক সেই দিনে দেবেন ঝাঁর পাশাপাশি ছিলেন দ্বারিকাদাস বিহানি। দক্ষিণ দিকের দরজার নেতৃত্বে ছিলেন অতুলচন্দ্র কুমার। সঙ্গে সত্যব্রত চক্রবর্তী, মহান্ত শুভনারায়ণ গিরি, নরেন চক্রবর্তী, যামিনী চট্টোপাধ্যায়, যতীন্দ্রমোহন সেন, অদিতি দুলাল দত্ত, জ্যোতির্ময় শর্মা প্রমুখ।
advertisement
পূর্বদিকের দরজার নেতৃত্বে ছিলেন ভূপেন্দ্রনাথ ঝার নেতৃত্বে অবাঙালি সত্যাগ্রহীরা, যাঁদের মধ্যে রামনীক চৌধুরী অন্যতম। সমকালের সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চারণকবি গৌরগোবিন্দ সেন সাইকেলে করে সারা আদালত চত্বর ঘুরে বেরিয়ে গান ও কবিতার মাধ্যমে সকলকে উদ্বুদ্ধ করছিলেন। প্রবীন স্বাধীনতা সংগ্রামী হিমাংশুভূষণ চক্রবর্তীর লেখা থেকে জানা যায়, পুলিশের গুলিতে ৬-৭ জন সত্যাগ্রহী মারা যায়-তিনজন কনস্টেবল সরাসরি নিরস্ত্র জনতার উপর গুলি চালাতে অস্বীকার করে ঘটনাস্থলেই পদত্যাগ করেন। সেদিন আদালত প্রাঙ্গনে তেরঙ্গা উড়েছিলো দেবেন ঝাঁ-র হাতেই-হিক্স কার্টারের বুটের লাথি,বন্দুকের বাঁটের আঘাত বা লাঠির বাড়ি-কোনটাই তাঁকে টলাতে পারেনি।
আরও পড়ুনঃ বিশ্ব মাতৃ দুগ্ধ সপ্তাহে জেলা প্রশাসনের বিশেষ অনুষ্ঠান
তরুণ সুভাষচন্দ্রকে তিনি অসম্ভব শ্রদ্ধা করতেন-আর সেই শ্রদ্ধা দলগত মতের উর্ধে উঠে, এমনকি তার বিরোধিতা করেও। তাই ১৯৩৮এ সুভাষচন্দ্র যখন মালদহে এসে বৃন্দাবনী মাঠের জনসভার পর স্থানীয় অনুরোধে পুরাতন মালদার সতীশচন্দ্র আগরওয়ালার বাড়িতে যাওয়ার জন্য গাড়িতে ওঠেন, আপত্তি তুলে দেবেন ঝাঁ সরাসরি বলেন-তাহলে সুভাষচন্দ্রকে বাঙ্গিটোলাতেও যেতে হবে। নানাভাবে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে শেষে গাড়ির চাকার সামনে শুয়ে পড়েন দেবেন ঝাঁ-গাড়ি থেকে নেমে অনুগামীকে হাত ধরে তোলেন সুভাষচন্দ্র। পুরাতন মালদা বা বাঙ্গিটোলা-শেষপর্যন্ত কোথাও যাননি তিনি।
আরও পড়ুনঃ আদিনায় হবে পাখি সুমারি, শামুকখোলের ভিড় ফরেস্টে
তাঁর পৌত্র সলিলবরণ ঝা স্মৃতিচারণ করে বলেন, নেতাজির প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা আমৃত্যু ছিলো, এমনকি শৌলমারি আশ্রম থেকে তাঁর বাঙ্গিটোলার ঠিকানায় নিয়মিত পত্রপত্রিকাও আসতো। ১৯৬৯ এ মৃত্যুর কিছু আগে ফরোয়ার্ড ব্লকে যোগদান করেন তিনি। ১৯৭১এ বন্যায় তাঁর আদি বাড়ি ভেঙে গেলেও কেউ খোঁজখবর নেয়নি। বহুদিন পর্যন্ত রেশন ডিলারশিপের লাইসেন্সই ছিলো ভরসা। বারবার বলতেন-\"এমন স্বাধীনতা চাইনি\"...আমরা চলে গেলে তাঁর নামটাও একেবারেই মুছে যাবে। শহরের বুকে একটা রাস্তার নামকরণ বা একটি মূর্তি প্রতিষ্ঠা এই নির্ভীক বিপ্লবীকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করতে পারবে-এটুকুই আজ পারিবারিক প্রত্যাশা।
Harashit Singha