এই কয়েক দিন আগে গেছে মোহনবাগান দিবস। ১৯১১ সালে ওই দিনে বুট পরা ইংরেজদের খালি পায়ে ১১ জন দামাল বাঙালি ছেলে পরাস্ত করেছিলেন ফুটবল খেলায়। সেই সময় এটি শুধু ফুটবল খেলা ছিল না, ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে এক লড়াইও। হুগলির উত্তরপাড়ার মনমোহন মুখোপাধ্যায় ছিলেন সেই ঐতিহাসিক মোহনবাগান একাদশের এক অন্যতম স্তম্ভ। তাঁর বাড়ানো পাস থেকেই গোল করে জয় লাভ করে তৎকালীন দেশীয় ফুটবল দল। মনমোহন বাবু ফুটবলারের সঙ্গে সঙ্গে একজন দেশ প্রেমিক ও ছিলেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে তিনি প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত না হলেও পরোক্ষ ভাবে সব সময় ছিলেন।
advertisement
আরও পড়ুন - প্রসব যন্ত্রণায় কাতর প্রেগন্যান্ট মহিলাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ডাক্তার-নার্সদের, মৃত সন্তান প্রসব
এমনই এক বাস্তবের কাহিনী নিউজ ১৮ কে জানালেন মনমোহন মুখার্জীর বর্তমান বংশধর তাঁর নাতি নিখিল মুখোপাধ্যায়। নিখিল বাবু জানান, তিনি যখন ছোট ছিলেন তখন তিনি এই গল্প তার দাদু মনমোহন মুখোপাধ্যায়ের মুখেই শুনেছিলেন। মনমোহন মুখোপাধ্যায় ফুটবল খেলার পাশাপাশি রোইংও করতেন। যার ফলে নৌকা চালানো তার পক্ষে খুবই সহজ কাজ ছিল। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তিনি সদা প্রস্তুত ছিলেন। তা সে ৯০ মিনিটের খেলাতে হোক বা রাতের অন্ধকারে একজন অচেনা ব্যক্তিকে নদী পার করানোর দায়িত্বই হোক। নিখিল বাবুর কথা অনুযায়ী, উত্তরপাড়ারই এক গণ্যমান্য ব্যক্তি একদিন মনমোহন মুখার্জিকে দায়িত্ব দেন রাতের অন্ধকারে এক ব্যক্তিকে নদী পার করে দেবার জন্য। মনমোহন বাবু ওই ব্যক্তিকে খুবই সমীহ করতেন তাই তিনি তার কথা অনুসারে প্রস্তুত হন।
আরও পড়ুন - Commonwealth Games 2022: পদক তালিকায় এগোচ্ছে ভারত, হরজিন্দর মেডেল পেতেই ৯ টি পদক হল ভারতের
কথা ছিল রাতের অন্ধকারে মনমোহন বাবু উত্তরপাড়ার মন্দির বাড়ি ঘাট থেকে কোনও এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে ডিঙ্গি নৌকায় করে নদী পার করিয়ে দেবেন। নির্দিষ্ট সময়ে মনমোহন বাবু পৌঁছান নদী পাড়ে। মনমোহন মুখার্জির উপর নির্দেশ ছিল তিনি যেন ওই ব্যক্তির সাথে কোনও কথা না বলেন।রাত তখন প্রায় দেড়টা, মনমোহন মুখার্জি নদীর পাড়ে অপেক্ষা করছিলেন তার আগন্তূকের। সেই সময়ই পরনের ধুতি গায়ে কালো চাদর নিয়ে হাজির হন আগন্তুক। কোনও কথা না বাড়িয়ে আগন্তুক চেপে বসেন তাঁর ডিঙ্গি নৌকায়। যথারীতি মনমোহন ও নৌকা ছেড়ে দেন। ঘন্টা দেড়েক কোনও কথা হয়নি দুজনার মধ্যে। মনমোহন বাবু সোজা নৌকা টেনে পৌঁছান আরিয়াদহ ঘাটে। ঘাটে পৌঁছে আগন্তুককে বিদায় দিয়ে তিনি ফিরে আসছিলেন তখনই আগন্তুক তাকে প্রশ্ন করে, ' তুমি কি জানো তুমি কাকে নৌকা পারাপার করেছো? ' মনমোহন বাবু কোন উত্তর দেন না। আগন্তুক তাকে আবারও একই প্রশ্ন করে মনমোহনবাবু তারপরও চুপ থাকেন। পরে আগন্তুক বুঝতে পারেন কথা না বলার নির্দেশ রয়েছে তার ওপর তাই তিনি চুপ। আগন্তুক তখন মনমোহন মুখার্জিকে আশ্বাস দিয়ে বলে তুমি কথা বলতেই পারো আমার সাথে এবং তোমার জানা উচিত তুমি আজ দেশের জন্য কি বিরাট কাজ করেছো। মনমোহন বাবু তখন হতভম্ব। আগন্তুক জানায় তার নিজের পরিচয়। আগন্তুক মনমোহন কে বলেন, ' তুমি আজ যাকে নদী পার করেছো তার মাথার দাম রেখেছে ইংরেজরা ১০হাজার টাকা। আগন্তুক তার নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন তিনি আর অন্য কেউ নন তিনি হলেন পরাধীন ভারতের সমস্ত বিপ্লবীদের মাস্টারদা, মাস্টারদা সূর্যসেন।
এই ঘটনাটি ১৯১১ শিল্ড জয়ের বেশ কিছু বছর আগেকার ঘটনা। নিখিল বাবু জানান, এই ঘটনার পর ইংরেজদের বিরুদ্ধে পরাক্রমি রূপ ধারণ করেন মনোমোহন বাবু। তারপরেই বুট পরা ইংরেজদেরকে খালি পায়ে এগারো জন তরুণ বিপ্লবী ফুটবলার খেলার মাঠে পরাস্ত করেন। ইংরেজদের পতাকা নামিয়ে সেখানে ওড়ানো হয় দেশের পতাকা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলা ও বাঙালি বিপ্লবীদের অবদান এভাবেই বহু ছোটো ছোটো বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে আজও অমর হয়ে রয়েছে দেশবাসীর চোখে।
Rahi Haldar