কুন্ডু চৌধুরী বাড়িতে পুজো শুরু হয় প্রতিপদ অর্থাৎ মহালয়ের পরদিন থেকে, প্রতিদিন নিয়ম করে চলে চণ্ডীপাঠ। পঞ্চমী পর্যন্ত বাড়ির একতলার ঠাকুরঘর লক্ষ্মী জনার্দনের কাছে পঞ্চমী পুজো অনুষ্ঠান চলে, ষষ্ঠীতে বেলতলা পুজো ও বোধন। পরিবার সুত্রে জানা যায়, সে সময় হাওড়ার কুন্ডু চৌধুরী বাড়ির জমিদারি ছিল ৭ জেলায়। হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, মেদিনীপুর ও বর্ধমান। জমিদারি শেষে কুন্ডু চৌধুরী বাড়ির সারা বছরজুড়ে বিভিন্ন পুজোঅনুষ্ঠান চালানোর জন্য পরিবারের সদস্যদের দ্বারাট্রাস্ট তৈরি হয় ১৯২৭ সালে।
advertisement
আরও পড়ুন: 'বিরোধীরা যাই বলুক, বুনিয়াদি শিক্ষায় সেরা বাংলাই', মমতার মুখে সাফল্যের হিসেব
পুজো পাঠের বিভিন্ন নিয়ম বিধি কুন্ড চৌধুরী বাড়ির ' অর্পণ নামা ' লিখিত হয়েছে। কুন্ডু চৌধুরী বাড়িতে বাসন্তী পূজা আগে থেকেই অনুষ্ঠিত হত। সে সময় ব্যবসায়িক পরিবার নৌকায় করে বাণিজ্য করতে যেত পরিবারের সদস্যরা। দুর্গম নদী পথ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্যান্য বিপদ আশঙ্কা থাকত। পরিবারের বাণিজ্যিক নৌকা বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে কুন্ডু চৌধুরী বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় শরৎকালে অকালবোধনে দুর্গাপুজো। নিয়ম করে দুর্গাপুজোর দশমীতে বোট অর্থাৎ নৌকা উপযোগ অনুষ্ঠিত হয়, এখন বুট পুজোও বলা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: ট্রাফিকে জেরবার রাস্তায় ৩ কিমি দৌড়ে হাসপাতালে গেলেন ডাক্তার! কেন? আসল ঘটনা শুনলে চমকাবেন
নবমীর সন্ধা থেকে পরিবারের বিবাহিত মহিলা মা কাকিমা কাঠের বোটটিকে কয়েন, কড়ি, সিঁদুর নতুন গামছা দিয়ে সাজিয়ে, বিশেষ স্থানে রেখে দেয়। দশমীর দিন পুজো করে, পুনরায় ঠাকুর ঘরে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দেওয়া হয় আবার ছয় মাস পর বাসন্তী পুজোর নবমীর দিন বের করে সাজানো হয় প্রতীকী নৌকোটি। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত চার দিন নিয়ম অনুযায়ী কুমারী পুজো হয়। বৈষ্ণব মতে পুজো হয় মা দুর্গা, পুজোর একদিন হরির নাম সংকীর্তন গান বসে কুন্ডু চৌধুরী বাড়িতে, অষ্টমীতে পরিবারের বিবাহিত মহিলাদের ধূনো পোড়ান। বৈষ্ণব মতে পুজো কোনরকম পশু বলির রীতি নেই তবে প্রথা অনুযায়ী বাতাবি লেবু বলি হয় তবে তা প্রকাশ্যে নয়।
বিজয় দশমীতে নিয়ম করে আজও পরিবারের সদস্যদের হাতে তৈরি মিষ্টি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১০০ নারকেল দিয়ে তৈরি নারিকেলের মিষ্টি। কুন্ডু চৌধুরী পরিবারে দেবতাদের মধ্যে শিবির প্রাধান্যই বেশি! কুন্ডু চৌধুরী বাড়িতে মহিষাসুরমর্দিনী রূপে পূজিত হন না এখানে শান্তির বার্তা নিয়ে সপরিবারে হরগৌরী! আশীর্বাদিকা রূপে দেবী দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, গনেশ, কার্তিক। নেই মহিষাসুর বা সিংহ, ষাঁড়ের উপর শিব, শিবের কোলে বসে মা দুর্গা।
রাকেশ মাইতি