পাতাল বাড়ি
কথিত ইতিহাস অনুযায়ী চন্দননগরের পাতাল বাড়িতে কবিগুরুর শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছিল। পাতাল বাড়ির গঙ্গার ঘাটে স্নান করতেন তিনি। নৌকা পথে যাত্রা করার সময় হঠাৎ হঠাৎই তিনি তার বাজরা ঘুরিয়ে চলে আসতেন পাতাল বাড়ির ঘাটে। সেখানেই বসে তিনি রচনা করেছেন নানান উপন্যাস, ছোটগল্প কবিতা। এদের মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য হলো ‘বউ ঠাকুরানীর হাট’। এই উপন্যাসটি তিনি রচনা করেছিলেন পাতাল বাড়িতে বসেই তার সেই উপন্যাসের মধ্যে এই পাতাল বাড়ির উল্লেখ রয়েছে।
advertisement
দত্ত ভিলা
চুঁচুড়ার জোড়াসাঁকোর বলা হতো একসময় এই দত্তভিলাকে। ১৮৭৯ থেকে ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত এই বাড়িতেই বসবাস করেছেন ঠাকুরবাড়ির পরিবারের সদস্যরা। একসময় এই বাড়ি চুঁচুড়া শহরের জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি বাগানবাড়ি হিসেবে পরিচিতি পায়। একসময় এই দত্ত ভিলাতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গান গেয়ে পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। বাড়ির বারান্দায় বসে রবীন্দ্রনাথ নিজে গান গেয়ে শুনিয়েছিলেন মহর্ষিকে।
আরও পড়ুন: তিনশো টাকা কেজি, হাত দেওয়াই দায়! হঠাৎ কেন এতটা বেড়ে গেল আদার দাম?
প্রবর্তক সংঘ
১৯২৬ সালে অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন প্রবর্তক আশ্রমে ।পরবর্তীকালে ১৯২৭ এবং ১৯৩৫ সালে মতিলাল রায়ের কাছে আসেন তিনি। স্বদেশী মেলা ও অক্ষয় তৃতীয়ার জন্য তিনি এসেছিলেন । এখানে আশ্রমের জীবনযাপন ও আত্ম উন্নতির পথে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন সন্ন্যাসীরা সেটা দেখার জন্যই এখানে আসা তার। আশ্রমিক জীবন যাপনে নিজের নিয়োজিত করার মধ্যে তিনি নিজেকে যুক্ত করেছেন প্রবর্তকের সঙ্গে।
তবে হুগলিবাসীর কাছে মন খারাপের কথা হলো এটাই যেখানে কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত এত জায়গা, সেই সমস্ত জায়গাতে একটি মালাও দেওয়া হল না তার জন্মদিনের দিন (প্রবর্তক ব্যতীত)। চন্দননগরের পাতাল বাড়ির দরজা আজও ছিল বন্ধ। চুঁচুড়ার দত্তভিলা সেখানেও কালের নিয়মে ধুলো জমে স্মৃতির ওপর মরছে ধরেছিল।
রবীন্দ্রনাথ হুগলিতে দুটি কবিতা লিখে তার জীবন স্মৃতিতে ব্যক্ত করেছেন তিনি, কবি লিখছেন, “পিতার কাছে ছোটোবেলায় হাসির পাত্র হয়েছিলাম। যুবা বয়সে আমি তার প্রতিশোধ নিতে পেরেছিলাম।” ১৮৮৬ সালে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে মাঘোৎসব পালন করছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর পিতা তখন চুঁচুড়ার দত্ত ভিলায়। কী ভাবে পালিত হয়েছে সেই উৎসব সেটা জানতেই রবীন্দ্রনাথকে ডেকে পাঠান তাঁর বাবা। তখন স্টিমার ধরে গঙ্গা হয়ে দত্তভিলায় আসেন কবি। সেখানে দেবেন্দ্রনাথ শ্রোতা হিসেবে এবং রবীন্দ্রনাথ তাঁকে একের পর এক গান শোনাচ্ছেন। আর তাঁকে হারমোনিয়ামে সঙ্গ দিয়েছেন তাঁর দাদা। তার মধ্যে একটি গান “নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছো নয়নে নয়নে” এই গান সমাপ্ত হলে দেবেন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘দেশের রাজা যদি ভাষা জানিত, সাহিত্যের কদর বুঝিত তাহলে যথাযোগ্য সম্মান দিত।’ এই বলে তিনি পাঁচশত টাকা উপহারস্বরূপ রবীন্দ্রনাথকে দিয়েছিলেন।
রাহী হালদার