এদিন বিকেলে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা অনন্ত মহারাজের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক। তাঁদের মধ্যে কী কথা হয়েছে তা নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে আলোচনা শেষে নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গেই বাইরে বেরিয়ে আসেন মহারাজ। সেই সময়ের সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে গ্রেটার নেতা ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে বলেন, নিশীথ প্রামাণিক তাঁর কাছে একটি আবেদন নিয়ে এসেছিলেন। তিনি সেই আবেদনে সম্মতি জানিয়েছেন। কী সেই আবেদন এই প্রশ্ন করলে অনন্ত মহারাজ বলেন, এটা এখন আমি বলব না। পরে সময় হলে জানতে পারবেন। তাঁর এই মন্তব্য শুনে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনুমান, বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের সবুজ সঙ্কেত পেয়েই নিশীথ প্রামাণিক রাজ্যসভার প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব নিয়েই গ্রেটার নেতার বাড়িতে যান। আলোচনার পর সেই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন মহারাজ।
advertisement
দার্জিলিং খবর | Darjeeling News
আরও পড়ুন: নবদ্বীপের ১০ টি পঞ্চায়েতের চূড়ান্ত ফল, শাসকের গড়ে বিরোধী থাবা
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বেলার দিকে খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র সঙ্গে রাজ্যসভার প্রার্থী হওয়া নিয়ে মহারাজের সরাসরি ফোনে দু’বার কথা হয়। উল্লেখ্য রাজ্য বিজেপির একটি সূত্র বলছে, উত্তরবঙ্গে প্রভাবশালী রাজবংশী ভোটের ফ্যাক্টরকে নিজেদের পক্ষের রাখতে নিশীথ প্রামাণিক বেশ কিছুদিন ধরেই অনন্ত মহারাজকে রাজ্যসভার প্রার্থী করার জন্য সওয়াল করছিলেন দলের অভ্যন্তরে। কারণ এর সঙ্গে ২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে তাঁর নিজের জয় পরাজয় নির্ভর করছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারেরও এই প্রস্তাবে সম্মতি থাকতে পারে বলে অনুমান। কারণ তিনিও উত্তরবঙ্গেরই সাংসদ। ঘটনা হল উত্তরবঙ্গে রাজবংশীর সম্প্রদায় প্রায় ২৩ টি বিধানসভা এবং ২ টি লোকসভার কেন্দ্রে নির্ণায়ক শক্তি। এছাড়াও উত্তরবঙ্গের বাকি আসনগুলিতেও তাদের কমবেশি উপস্থিতি আছে। ১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে রাজবংশীরা ঢেলে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিল বলে গেরুয়া শিবিরের অনুমান। তবে উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করা সহ বেশ কিছু দাবি-দাওয়ার সরাসরি বিরোধিতা বিজেপির দক্ষিণবঙ্গের নেতারা করায় রাজবংশীরা চটেছে। এই অবস্থায় রাজবংশী সম্প্রদায়ের বর্তমানের সবচেয়ে বড় নেতা অনন্ত মহারাজকে রাজ্যসভায় পাঠালে তার ডিভিডেন্ট ২৪ এর লোকসভা ভোটে পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন নিশীথ প্রামাণিকরা।
অনন্ত মহারাজকে শেষ পর্যন্ত বিজেপি রাজ্যসভার প্রার্থী করবে কিনা তা আর একদিনের মধ্যেই জানা যাবে। কারণ বাংলায় ফাঁকা হওয়া ৭ টি রাজ্যসভা আসনের মধ্যে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যার নিরিখে একটি আসনে জয় নিশ্চিত। তবে ১৩ জুলাই মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। তাই ১২ জুলাই অর্থাৎ বুধবারের মধ্যে নিশ্চিতভাবেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে হবে তাদের। কিন্তু অনন্ত মহারাজকে প্রার্থী করলে বিজেপির দক্ষিণবঙ্গের বিধায়করা মেনে নেবেন তো? নিশীথ-মহারাজ সাক্ষাতের খবর জানাজানি হয়ে যেতেই এই প্রশ্নই জোরদার হয়ে উঠেছে গেরুয়া শিবিরের অভ্যন্তরে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপির জোট! বিরাট সাফল্য BGPM-র
অনন্ত মহারাজকে এর আগে কখনও বিজেপিকে আবার কখনও তৃণমূলকে নিজের হাতে রাখার চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে। তবে কোচবিহারের পাশাপাশি লাগোয়া অসমেও তাঁর ভালো প্রভাব আছে। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা আছে বলে জানা যায়। ১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ মালদহ কেন্দ্রটি বাদে উত্তরবঙ্গের বাকি সবকটি লোকসভা আসনে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। কিন্তু ২১ এর বিধানসভা ভোটেই দেখা গিয়েছিল উত্তরবঙ্গে তাদের সেই গড়ে অল্প অল্প ফাটল ধরছে। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই ফাটল দিয়েই হু হু করে ঢুকতে শুরু করেছে জল। এই পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গের কোনও আসনকেই আর একেবারে নিশ্চিত বলে ধরার সাহস দেখাতে পারছে না গেরুয়া শিবির। তাই সেখানকার বিধায়ক-সংসদরা অনন্ত মহারাজকে রাজ্যসভায় পাঠানোর পক্ষে। কারণ সকলেরই পাখির চোখ রাজবংশী ভোট। এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভায় সাংসদ পাঠাতে পারবে বিজেপি। সেখানে অনন্ত মহারাজকে বেছে নিলে রাজবংশী ভোট পুরোপুরি তাঁদের দিকে চলে আসবে বলে আশা। কিন্তু এই সমীকরণটাই গলার কাঁটা হয়ে উঠছে বিজেপির দক্ষিণবঙ্গের বিধায়ক-সাংসদদের। কারণ এই অনন্ত মহারাজ অর এর আগে অসংখ্যবার ‘বঙ্গভঙ্গের’ দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। কিছুদিন আগেও তিনি উত্তরবঙ্গকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার পক্ষে জোরদার সওয়াল করেন। ফলে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠালে তৃণমূল ও বামেরা বিজেপিকে বঙ্গভঙ্গের মদদানকারী দল হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করতে পারে। তাতে উত্তরবঙ্গে লাভ হলেও আগামী লোকসভা ভোটে দক্ষিণবঙ্গে পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়তে পারে গেরুয়া শিবির। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণবঙ্গের এক বিজেপি বিধায়ক এই প্রসঙ্গে বলেন, ওনাকে রাজ্যসভায় পাঠালে ২৪-এ দক্ষিণবঙ্গে বিজেপির আর কোনও আশা থাকবে না। এমনকি এই সিদ্ধান্তের পর দক্ষিণবঙ্গের নেতাকর্মীদের একাংশের মধ্যে দলত্যাগের প্রবণতা বাড়তে পারে বলে তার আশঙ্কা।
সার্থক পণ্ডিত