আনুমানিক প্রায় ৬০ বছর আগের কথা। মালতী আলিপাত্র বিয়ে করে ঘর বেঁধেছিলেন নলহাটি দুই নম্বর ব্লকের শীতল গ্রামে। বিয়ের যৌতুক হিসাবে বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিলেন একটি রেডিও। মহালয়ার ভোরে সেই রেডিও থেকে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে ভেসে এসেছিল ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর…’। এই সুর শুনেই আলিপাত্রদেরবাড়িতে ছুটে এসেছিলেন গ্রামের আবালবৃদ্ধবণিতা। অবস্থাপন্ন সেই বাড়িতে তখন পা রাখার জায়গা নেই। মালতি দেবীর আক্ষেপ, ‘‘আমি সে সময় নতুন বউ হয়ে বাড়িতে এসেছি। কিন্তু গ্রামের কেউ আমাকে দেখতে আসেননি। এসেছিলেন রেডিওতে মহালয়ার গান শুনতে। কারণতখন গ্রামে রেডিও বলতে শুধু আমাদের বাড়িতেই ছিল।’’
advertisement
এর পর থেকে শুধু মহালয়ার দিনই নয়, রেডিওতে খবর, যাত্রা শুনতেও ভিড় জমাতেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে রেডিওর চল কমেছে। এখন ইন্টারনেটের যুগে হাতের মুঠোয় দুনিয়া। ইউটিউবে গেলে সব সময়েই মহালয়ার সুর ভেসে আসে। ফলে বাড়িতে রেডিও বাজালে নাতিনাতনিরা বন্ধ করে দেয়। তবে মহালয়ার ভোরে রেডিওর কদর আজও রয়েছে।
শুধু মহালয়া নয়, মালতি দেবী আজও নিয়মিত রেডিওতে খবর শোনেন। তবে এখন আর ভিড় করেন না গ্রামবাসীরা। এখন মালতি দেবীএবং তাঁর বাপের বাড়ি থেকে দেওয়া রেডিও একাকী দিন কাটায়। তবে মহালয়ার দিন কাছে এলেই মুখে হাসি ফোটে রেডিওর এই মালকিনের।এখন রেডিওর সব যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় না। ফলে অধিকাংশ রেডিও এখন মিউজিয়ামে ঠাঁই করে নিয়েছে। তা হলেও মালতীদেবীর রেডিও এখনও সঙ্গ দিয়ে চলেছে ।