প্রায় সাতশো কিলোমিটারেও বেশি পথ সড়ক পথে লরিতে চেপে ঝাড়গ্রাম থেকে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের রাজাভাতখাওয়া পৌঁছোয় ওই দেশান্তরি দাঁতাল হাতি। ওই আটচল্লিশ ঘন্টার সময় কালে সর্বকালের জন্যে তার পর্যবেক্ষণে ছিলেন একজন বন্যপ্রাণ চিকিৎসক। স্বভাবে দামাল হলেও যাত্রা পথে কোনো রকম বেয়াদপি করেনি সে। স্বাভাবিক ভাবেই খেয়েছে খাবারদাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। মুক্তি পাওয়ার পর দীর্ঘ সময় ধরে অচেনা পরিবেশে থমকে ছিল সে। ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল একই জায়গায়।
advertisement
খানিকটা ধাতস্থ হওয়ার পর ধীরে ধীরে দুলকি চালে জঙ্গলের আরও গভীরে মিলিয়ে যায় ঝাড়গ্রামের আতঙ্ক। হস্তি বিশেষজ্ঞ ও বনকর্তারা আশাবাদী যে অচিরেই নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেবে ওই নতুন অতিথি। এমনকি মওকা মতো ভিড়ে যাবে নতুন কোনো দলে। একেতেই সে বয়সে নবীন ও তার দাঁত গুলো অত্যন্ত আকর্ষণীয় হওয়ায়, বুনো মাদিদের নজরে পড়তে বিশেষ সময় লাগবে না। তবে ওই দাঁতালকে নিয়ে এতটুকু ঝুঁকি নিতে রাজি নয় বনদপ্তর। যতক্ষণ না সে নতুন দলের সদস্য হয়ে উঠছে ততদিন পর্যন্ত তার গতিবিধির উপর কড়া পর্যবেক্ষণ জারি থাকবে।
আরও পড়ুনঃ নতুন প্রজন্মকে নিয়ে আদিবাসী নৃত্যের প্রশিক্ষণ আলিপুরদুয়ারে
বিশিষ্ট হস্তি বিশারদ পার্বতী বরুয়া বলেন 'দেশে ইতিপূর্বে বহুবার হাতিদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই সমস্যা হয়নি। আশা করছি ঝাড়গ্রামের আগন্তুকের ক্ষেত্রেও অস্বাভাবিক কিছু ঘটবে না।' কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের সবুজ সংকেত নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম থেকে মোট দশটি দলমার অত্যাচারি হাতিকে উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে দেশান্তরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বনদপ্তর। ওই পরিকল্পনার প্রথম ধাপ হিসেবে শনিবার বক্সার জঙ্গলে নিয়ে আসা হয়েছে ওই বুনো দাঁতালকে।
আরও পড়ুনঃ নদী ভাঙনের ভয়ে রাতের ঘুম উড়েছে আলিনগর পূর্বপাড়ার বাসিন্দাদের
মূলতঃ জঙ্গলমহলের লোকালয়ে হাতি মানুষের সংঘাত এড়াতেই হাতি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ওই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে বনদপ্তর। ইতিপূর্বে দক্ষিণবঙ্গ থেকে যত গুলো বুনো হাতিকে উত্তরবঙ্গে ধরে নিয়ে আসা হয়েছিল, তাদের কাউকেই আর জঙ্গলের পরিবেশে না ফিরিয়ে বনসুক্ষার কাজের জন্যে তালিম দিয়ে কুনকি হাতি তৈরি করা হয়েছিল। সেই অর্থে ঝাড়গ্রামে ধরা পড়া ওই দলমার দামালকে এই প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে ফের প্রকৃতিতেই ফিরিয়ে দেওয়া হ'ল।
Annanya Dey