কপিল দেব নিখঞ্জ: জীবন, পুরস্কার, কেরিয়ার এক ঝলকে
পুরো নাম: কপিল দেব নিখঞ্জ
জন্ম: জানুয়ারী ৬, ১৯৫৯
উচ্চতা: ১.৮৩ মিটার
জাতীয়তা: ভারতীয়
ক্রীড়াবিদ: অল রাউন্ডার
ডান-হাতি ব্যাটসম্যান এবং ডান-হাতি বোলার
পরিবার:
পিতা: রাম লাল নিখঞ্জ
মা: রাজ কুমারী লাজবন্তী
স্ত্রী: রোমি ভাটিয়া
কেরিয়ারের সূচনা:
ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক কপিল দেবের জন্ম ১৯৫৯ সালের জানুয়ারি মাসে। তিনি এখনও পর্যন্ত ভারতের সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলিং অলরাউন্ডার। হরিয়ানা হ্যারিকেন নামে পরিচিত কপিল ডান-হাতি ফাস্ট বোলার এবং ডান-হাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে ক্রিকেটের ময়দানে তাঁর অভিষেক হয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে। যদিও টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচে তিনি তেমন আশাপ্রদ ফল করতে পারেননি। কিন্তু ১৯৭৮ সালে একই সিরিজের তৃতীয় টেস্ট ম্যাচে তিনি মাত্র ৩৩ বলে একটি অর্ধশত রান করেন। ওই ম্যাচে তাঁর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দেখেই অনেকেই বুঝেছিলেন যে, এক উজ্জ্বল তারকার উত্থান হতে চলেছে।
খেলার প্রেক্ষাপট:
কপিল দেব ছিলেন ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ পেস বোলার এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ফাস্ট-বোলিং অলরাউন্ডার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামে মাত্র ১২৪ বলে প্রথম টেস্ট ক্রিকেট সেঞ্চুরি হাঁকান কপিল। ইংল্যান্ড সফরে তিনি প্রথম ৫ উইকেট নেন। এর পর কপিল দেব ১৯৭৯ সালে হোম সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুটি পাঁচ উইকেট নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট দলের এক বিশিষ্ট সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন।
১৯৭৯-৮০ মরসুমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মোট ছয়টি টেস্ট হোম সিরিজে অসাধারণ পারফরমেন্স দেখিয়েছিলেন কপিল। সেই সিরিজে ভারতকে দুই বার জয়ও এনে দেন তিনি।এক বার মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ৬৯ রানের নক খেলেন এবং দ্বিতীয় বার চেন্নাইয়ের চিপক স্টেডিয়ামে তাঁর দুরন্ত বোলিং দিয়ে কপিল দেব মোট ১০টি উইকেট নিয়েছিলেন।
উত্থান:
দেশের হয়ে মোট ১৩১টি টেস্ট খেলেছেন কপিল দেব। ৩১.০৫ গড় হারে মোট ৫২৪৮ রান করেছেন, যার মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ১৬৩।
অন্য একটি টেস্ট ম্যাচে তিনি ১৪৬/১১-এর সেরা বোলিং পারফরমেন্স-সহ ২৯.৬৫ গড় হারে মোট ৪৩৪টি উইকেট নিয়েছিলেন। তিনি এখনও পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ফাস্ট বোলিং উইকেট হান্টার।
কপিল দেব ভারতের হয়ে মোট ওডিআই ফরম্যাটে ২২৫টি ম্যাচ খেলেছেন এবং ২৩.৭৯ গড় হারে মোট ৩৭৮৩ রান করেছেন। যার মধ্যে সর্বোচ্চ রান ছিল ১৭৫। এর মধ্যে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে এক দুর্ধর্ষ ঐতিহাসিক ম্যাচ খেলেন কপিল। ভারতের স্কোর ছিল ১৭/৫। ফলে হার ছিল অবশ্যম্ভাবী। সেই জায়গা থেকে দলকে টেনে বার করে আনেন কপিল দেব। ১৩৮ বলের একটি ঝোড়ো ইনিংস খেলে তিনি ১৭৫ রানের রেকর্ড গড়ে ভারতীয় দলকে জয়ের স্বাদ এনে দিয়েছিলেন। কপিল ২৭.৪৫ গড় হারে মোট ২৭৩টি উইকেট নিয়েছেন, যার মধ্যে সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৫/৪৩।
কৃতিত্ব এবং পুরস্কার:
২০০২ সালে উইজডেন দ্বারা ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার অফ দ্য সেঞ্চুরি’ হিসাবে ভূষিত হন কপিল। এ-ছাড়াও তিনি ভারত সরকারের তরফ থেকে অর্জুন পুরস্কার এবং পদ্মভূষণ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন।
তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব ছিল ভারতকে প্রায় নিরলস ভাবে নেতৃত্ব দিয়ে যাওয়া। এর পাশাপাশি নিজের অলরাউন্ডার দক্ষতার মাধ্যমে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে তিনি দেশকে জেতানোর পাশাপাশি বিশ্ব-রেকর্ডও সৃষ্টি করেছিলেন।
কপিল দেব ১৯৯৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০০০ সালের অগাস্টের মধ্যে প্রায় ১০ মাস ভারতের কোচ হিসেবে অসাধারণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এর পরেও অবশ্য তিনি বোলিং কোচ হিসেবে ক্রিকেটে ফিরে আসেন এবং দুই বছর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।