১৭৪৮ থেকে ১৭৫৩ সালের কোন এক সময়ে বর্ধমান থেকে বর্গিরা আক্রমণ করতে করতে ক্ষীরপাইয়ের দিকে আসছিল। ক্ষীরপাইয়ের মানুষ ভয় পেয়ে তৎকালীন ক্ষীরপাই-র দায়িত্বপ্রাপ্ত ইংরেজ অফিসার এডওয়ার্ডস বাবরসকে অনুরোধ করেন বর্গি আক্রমণ থেকে ক্ষীরপাইকে রক্ষা করার জন্য। এডওর্য়াস্ বাবরস ক্ষীরপাইয়ের শহরে অনতিদূরে শ্যামদেবের কাছে বর্গীদের আটকে দেন। পরান আটা নামে জনৈক মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী ময়দা, দুধ, ঘি, মধু দিয়ে নতুন এক মিষ্টি তৈরি করে এডওয়ারস বাবরসকে উপহার দেন। তারপর থেকেই এডওর্য়াস বাবরস্-এর নাম অনুসারে বাবরসা নামটি এসেছে।
advertisement
ভিন্নমতে এলাকার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী মোঘল সম্রাট বাবরকে খুশি করতে বাবরের সেনাপতির হাতে গাওয়া ঘি, ময়দা, দুধ ও মধুর সংমিশ্রণে এক নতুন ধরনের মিষ্টি তৈরি করেছিলেন বাবরকে উপহার হিসাবে পাঠান। খোদ বাবর এই মিষ্টি খেয়ে প্রশংসা করেন তার নাম অনুসারে বাবরসা নামটি এসেছে বলেই জানা যাচ্ছে। যে মিষ্টির সঙ্গে এমন ইতিহাস ও জনশ্রুতি মিশে আছে সে তো জনপ্রিয় হবেই।
আরও পড়ুন - Maha Shivratri 2023: এই শিবরাত্রিতে রয়েছে মহাযোগ! জানুন কী করলে পাবেন মহাদেবের আশীর্বাদ
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাজুড়ে ও জেলার বাইরেও বিখ্যাত এই মিষ্টির নাম। বর্তমানে বাবরসা ক্ষীরপাই ছাড়িয়ে ভিন রাজ্যেও পাড়ি দিচ্ছে। ক্ষীরপাই পৌর এলাকার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা বহু কষ্টে পরম্পরায় এই মিষ্টিকে আজও টিকিয়ে রেখেছেন। তাঁরা দীর্ঘদিন দাবি করছিলেন বাবরসা মিষ্টান্নকে জি আই তকমার অন্তর্ভুক্ত করা হোক। দাবি উঠেছিল আপামর ক্ষীরপাই-র অধিবাসীদের পক্ষ থেকেও। ক্ষীরপাইবাসী ও মিষ্টির ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে ক্ষীরপাই পৌরসভা সরকারিভাবে বাবরসার জি আই তকমার জন্য আবেদন জানালো সংশ্লিষ্ট দফতরে।
আরও পড়ুন - West Medinipur News: অভিষেক ঘুরে যেতেই দেড়শো বছরের অপ্রাপ্তি পূর্ণ হল মাত্র ১৩ দিনে!
দি ওয়েস্ট বেঙ্গল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ ল সায়েন্স প্রতিনিধির হাতে এই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে ক্ষীরপাই পৌরসভার পক্ষ থেকে। সবকিছু ঠিক থাকলে বাবরসা রসগোল্লার থেকে সুস্বাদু, প্রাচীনত্বের দিক থেকে এগিয়ে যাবে অনেকটাই। ক্ষীরপাই-এর পৌরপ্রধান দুর্গাশঙ্কর পান বলেন," আমরা আশা করছি শীঘ্রই বাবরসার জি আই তকমা পেয়ে যাবে।" ক্ষীরপাই-এর পৌর ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বীরেশ্বর পাহাড়ি বলেন, " বাবরসা জি আই তকমা পেলে বিশ্ব বাজারে তার খ্যাতি বাড়বে।" ক্ষীরপাই পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পাপিয়া রায় জানান, ‘‘জি আই তকমার জন্য আমরা সরকারি বিভিন্ন মহলে বারবার দরবার করেছি। সেই কাজই পূর্ণতা পাওয়ার লক্ষ্যে অনেকটাই এগোল। আমরা ক্ষীরপাইবাসী ইতিহাস প্রসিদ্ধ বাবরসা মিষ্টান্ন নিয়ে গর্ববোধ করি। আগামী দিনেও করতে পারব।’’
Ranjan Chanda