করোনা পরিস্থিতির জন্য গত দু'বছর এই পাহাড় পুজো বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এখানকার পুজোয় এবারে কাতারে কাতারে লোকজন সামিল হয়েছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে এই কানাইসোর পাহাড় পুজো অনেক প্রাচীন। মূলত এখানকার আদি জনজাতি বাসিন্দারা চাষবাসের আগে প্রকৃতিকে সন্তুষ্ট করতে এই পাহাড়ের পুজো করে থাকেন। এঁদের লোকবিশ্বাস মতে এই পাহাড় পুজো করলে চাষবাস ভাল হবে,অতিবৃষ্টিতে কেউ বানভাসি হবে না, হড়পাবান হবে না । তাই চাষবাস শুরু করার আগে কৃষিজীবী সবাই পাহাড়ে পুজো দেন ।
advertisement
স্থানীয় সূত্র মতে, বহু বছর আগে এলাকায় প্রবল বন্যায় ঘরবাড়ি ,গরামথান বা গ্রামরক্ষার দেবতা সমস্ত কিছু ভেসে গিয়েছিল । পাহাড় পার্শ্ববর্তী ঢেঙাম গ্রামের বাসিন্দারা সেই সময় পাশাপাশি অন্যান্য গ্রামবাসীদের সঙ্গে সভা করে তবে গ্রাম রক্ষার দেবতাকে এই পাহাড়ে প্রতিষ্ঠিত করেন। সেই সময় থেকেই এই পাহাড়ে ঢেঙাম গ্রামের মাহালি সম্প্রদায় পূজারী হিসেবে রয়েছেন। শনিবার এই পাহাড় পুজো অনুষ্ঠিত হয় । দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়-স্বজন ও কুটুম লোকজন ওই এলাকায় এসে হাজির হন । অন্যান্য গরামথানে পোড়া মাটির হাতি গড়া মূর্তি উপবিষ্ট করে রাখার মতো এই পাহাড়েও সেই মূর্তি রেখে পূজো করা হয়। পুজোয় মুরগি বা ছাগ বলি প্রথা প্রচলিত রয়েছে।
আরও পড়ুন : ঝাড়গ্রামে সাইকেল-সহ আরোহীকে পিষে দিল দু’টি হাতি, অল্পের জন্য রক্ষা স্ত্রীর
আরও পড়ুন : সদ্যোজাতকে ফেলে পলাতক মা, চাঞ্চল্য নদিয়ার শান্তিপুরের নিষিদ্ধ পল্লীতে
ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি থেকে এই পাহাড়ের দূরত্ব প্রায় ৯ কিমি। চাকুলিয়া রেলস্টেশন থেকে এই পাহাড়ের দূরত্ব প্রায় ১১ কিমি। বিনপুর ২ ব্লকের সোন্দাপাড়া গ্রামপঞ্চায়েতের সীমান্তবর্তী কেন্দাপাড়া রাঙামাটি, ডুমুরিয়া ও সীতাপুর এই গ্রামগুলির একেবারে পাহাড়ের পাশে অবস্থিত। পাহাড় পুজো ঘিরে এখানে বড় আকারের মেলা বসে । এই মেলাতে লোকসংস্কৃতির সমস্ত রকমের বাদ্যযন্ত্র ও কৃষিকাজের নানা সামগ্রী পাওয়া যায়। পাহাড় পুজোর পরের দিন রবিবার পাশেই কেবলমাত্র আদিবাসীদের বারাঘাটে পৃথক পাহাড়পুজো ও আচার অনুষ্ঠান পালিত হয়। রবিবার বারাঘাটে আদিবাসীদের নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে 'বঙাবুরু' বা পাহাড় পুজো পালন করা হয়। তাই রবিবারের আদিবাসীদের পাহাড় পূজার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শনিবার থেকেই দূর দূরান্ত থেকে লোকজন পুজোর জন্য আত্মীয়-বাড়িতে হাজির হন।
Partha Mukherjee