২০০২-০৩ সাল নাগাদ পুরাতাত্বিক খননের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে মোগলমারি বৌদ্ধ বিহার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অশোক দত্তের নেতৃত্বে এই ঐতিহাসিক স্থান পুনরুদ্ধারের কাজ চলে। জানা যায় ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে সক্রিয় ছিল এই বৌদ্ধ বিহারটি। নয়টি পর্যায়ে খনন কাজ হয়েছে দাঁতনের মোগলমারি বৌদ্ধ বিহারে। প্রথমের সাতটি পর্যায়ে খনন কাজের দায়িত্বে ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক অশোক দত্ত। তাঁর মৃত্যুর পর দায়িত্ব পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিক প্রকাশচন্দ্র মাইতি। তাঁর তত্ত্বাবধানে দুটি পর্যায়ের খনন হয়েছে। ২০১৫-১৬ সালের খননে ৯৫টি ব্রোঞ্জের মূর্তি পাওয়া যায়। যার মধ্যে ২৫-৩০টি বুদ্ধমূর্তি ছাড়াও অন্যান্য মূর্তিও পাওয়া যায়। এখানে বহু প্রত্ন সামগ্রী পাওয়া গিয়েছে মাটির নীচে থেকে। বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার হওয়া সেই সকল প্রত্ন সামগ্রী কলকাতা যাদুঘরে সংরক্ষিত করা আছে। তবে এখানকার সাধারন মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, মোগলমারিকে কেন্দ্র করে এলাকায় পৃথক একটি মিউজিয়াম তৈরি করা হোক। তাঁদের সেই দাবিই অবশেষে মান্যতা পেতে চলেছে।
advertisement
আরও পড়ুন: আদিবাসী সংস্কৃতি তুলে ধরার লক্ষ্যে শুরু হয়েছে 'জয় জোহার মেলা'
মোগলমারিতে মিউজিয়ামের জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন সমস্যা ছিল। ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, স্থানীয় দু'জন ব্যক্তি মিউজিয়াম তৈরির জন্য সরকারকে জমি দান করতে সম্মত হওয়ায় সেই সমস্যা মিটেছে। প্রায় ২০ ডেসিমেল জায়গার ওপর তৈরি হবে এই মিউজিয়াম। ব্লক প্রশাসন, জেলাশাসকের সঙ্গে পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরাও সেই জায়গা পরিদর্শন করেন। এই প্রসঙ্গে জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন," বৌদ্ধ প্যাগোডার আদলে মিউজিয়ামটি গড়ে তোলা হবে। স্কেচ ইতিমধ্যেই হয়ে আছে। দ্রুত আমরা কাজ শুরু করতে পারব। বৌদ্ধ বিহার খননের সময় যে সব সামগ্রী পাওয়া গিয়েছে সেগুলো সব এখানে রাখা থাকবে।" নতুন করে সমস্ত দিক সংরক্ষণের কাজ করা হয়েছে। স্ট্যাকো মূর্তি সংরক্ষণ, সংশ্লিষ্ট দেওয়ালের ওপরে স্থায়ী ছাউনিও তৈরি করা হয়েছে। গবেষক আতানুনন্দন মাইতি বলেন, "দাঁতনের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইতিহাস। মোগলমারিকে কেন্দ্র করে মিউজিয়াম হলে পর্যটক, গবেষক, ছাত্রছাত্রীরা মোগলমারি সম্পর্কে ওয়াকিহাল হবে। কী প্রত্নসামগ্রী উদ্ধার হয়েছে তা তাঁরা জানতে পারবেন। ইতিহাস প্রসিদ্ধ এই স্থানে আরও খনন জরুরি।"
এই মিউজিয়াম তৈরীর বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা অভিষেক মাইতি বলেন, "মোগলমারিতে মিউজিয়াম গড়ে উঠলে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে। তাতে স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশ ঘটবে। পর্যটন মানচিত্রে নতুন দিশা পাবে দাঁতন।"
রঞ্জন চন্দ