ভৌতিক উপদ্রবের কথাও মানতে চান না তারা। আবার বেনাগ্রামের আদি বাসিন্দা যারা ছিলেন, তারা বলেন, বর্তমান সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে উঠতে পারেনি বেনাগ্রাম। আধুনিক সমস্ত সুবিধা ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে গ্রাম ছেড়েছিলেন স্থানীয় মানুষজন। কিন্তু বেনাগ্রাম কি সত্যিই ভৌতিক? নাকি নেপথ্যে রয়েছে অন্য কোনও কারণ?
আরও পড়ুনঃ মানতেই পূর্ণ মনস্কামনা, সেজে উঠছে নৈহাটির জাগ্রত 'বড়মা', পুজো বিশেষ রীতি মেনেই
advertisement
বেনাগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে গ্রামের শেষ প্রান্তে থাকা একটি ডাকাত কালী মন্দির। যে কালী মন্দিরে এখনও প্রতিদিন পুজো হয়। কালী পুজোর সময় পুজো হয় মহা ধুমধামে। একটি সূত্র বলছে, বেনাগ্রামের উত্থান পতনের সাক্ষী দেবী ডাকাত কালী। বেনাগ্রামের পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে, আসানসোল ধানবাদ রেললাইন। অনেকেই বলছেন এই রেললাইন গ্রামের পতনের অন্যতম কারণ। রেললাইনের জন্য বেনাগ্রাম ও সংলগ্ন এলাকায় উপদ্রব বেড়েছিল ওয়াগন ব্রেকারদের। আর তাদের দাপাদাপি আর কুটিলতার কাছে হার মেনে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন এলাকার মানুষ। নিজেদের সুবিধার্থে বেনাগ্রামকে একটি ক্রিমিনাল বেল্টে পরিণত করেছিল ওয়াগন ব্রেকাররা।
সূত্রের খবর, নিজেদের সুবিধার্থে বেনাগ্রামকে ফাঁকা করে দিয়েছিল। অবলম্বন করেছিল অসাধু উপায়। হাতিয়ার করেছিল ভৌতিক নানান কাহিনী।
জানা যায়, ১৫-২০ বছর আগে যখন রেলের নিরাপত্তা ততটা উন্নত ছিল না, তখন ওই রেল লাইনের দৌরাত্ম ছিল ওয়াগন ব্রেকারদের। রেললাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন মালগাড়ি থেকে চুরি যেত জিনিসপত্র এমনকি যদি ট্রেন না দাঁড়াতো, তাহলে কেটে দেওয়া হত ভ্যাকিউম পাইপ। তারপর সেখানে চলতে লুটতরাজ। এই ওয়াগন ব্রেকারদের সর্দারের নাম ছিল মহাবীর শেঠ, জানা যায় তেমনটাই। মহাবীর সেট ও তার দলবল ওই এলাকায় নিয়মিত লুটতোরাজ চালিয়ে যেত। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ওয়াগন ব্রেকারদের এই কার্যকলাপের প্রতিবাদ করেছিলেন বেনাগ্রামের স্থানীয় কয়েকজন মানুষ। তারপরেই প্রাণ হারান তারা। আর তখন থেকেই গ্রামে ভৌতিক উপদ্রবের নানান কাহিনী এবং কার্যকলাপ শুরু হয়। আর তখন থেকেই খালি হয়ে যায় বেনাগ্রাম।
আরও পড়ুনঃ কেষ্ট ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাস, গরু পাচারকাণ্ডে আরও বড় রহস্য ফাঁস!
অন্যদিকে, স্থানীয়দের অভিযোগ, বেনাগ্রামে সেসময় ছিল না বিদ্যুৎ। ছিল না রাস্তা। ফলে আশপাশের অন্যান্য গ্রামগুলির থেকে পিছিয়ে পড়ছিলেন বেনাগ্রামের মানুষ। বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে তারা গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আর তখন থেকেই পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে কোলাহলে ভোরে থাকা বেনাগ্রাম। যে গ্রামের বর্তমান চেহারা কঙ্কালসার। সেখানে নির্মিত বাড়ি গুলির বর্তমান অবস্থা দিনের বেলাতেও ভয় ধরায়। চারিদিকে জঙ্গল। কৃষি জমিগুলি দখল করেছে আগাছা। আর বেনাগ্রাম নিয়ে ছড়িয়েছে নানান ভৌতিক কাহিনী।
তবে দিনের বেলায় বেনাগ্রাম আপাত নিরীহ ফাঁকা থাকা পড়ে থাকা একটি জায়গা। তবে গ্রামের পাশে থাকা রেল লাইন সদা ব্যস্ত। সেখানে হরদম যাতায়াত যাত্রীবাহী ট্রেন, মালবাহী ট্রেনের। সঙ্গে রয়েছে নিরাপত্তা কর্মীদের নজরদারি। গ্রামের রাস্তা দিয়ে পুলিশের টহলদারি চোখে পড়ে। পাশাপাশি দিনের বেলায় দু একজন মানুষ এই রাস্তা ব্যবহার করে নিজেদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য। আর গ্রামের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে পাহারায় থাকেন দেবী ডাকাত কালী। ওয়াগন ব্রেকারদের হাতে যে কালীর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বলে ধারণা স্থানীয় এলাকার বেশিরভাগ মানুষের। তবে সন্ধ্যের পর থেকেই এই রাস্তা হয়ে পড়ে জনমানবহীন। তবে গ্রামের আদি মানুষজন চান আবার প্রাণ ফিরে পাক বেনাগ্রাম। ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাক ভৌতিক কলঙ্ক।
Nayan Ghosh