উত্তর দিনাজপুরের এই গ্রামে বাড়ির মেয়ে-বউরা সংসারের কাজ করার পাশাপাশি সুযোগ পেলেই বাড়ির উঠোনে বসে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ডালি-কুলো তৈরি করেন। আর পুরুষরা এই বিশেষ ধরনের কুলো বিভিন্ন হাটে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন। তা থেকে সামান্য যা আয় হয় তা দিয়েই তাঁদের সংসার চলে। তার ওপর এখন চাহিদাও কমে গেছে। ফলে কোনদিন আয় হয়, আবার কোনদিন ফাঁকা হাতেই হাট থেকে ফিরতে হয়।
advertisement
আরও পড়ুন: করোনার ধাক্কায় পড়াশোনার মান কমেছে, সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী মালদহ
বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এক ডালি-কুলো তৈরির কারিগর বললেন, বাঁশের দাম বেড়ে গেছে। একটা বাঁশ কিনতেই ১০০ টাকা খরচ হয় । একটা বাঁশ থেকে দুটো থেকে তিনটে ডালি তৈরি করা হয়। সেই ডালিগুলো ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করি। তবুও কেউ কিনতে চায় না। এখানকার কারিগরদের আক্ষেপ, তাঁরাও তো এক ধরনের শিল্পী। তাঁরা শত কষ্ট সত্ত্বেও এই পৈতৃকব্যবসা আঁকড়ে ধরে থাকলেও সরকার থেকে কোনও সাহায্য পাওয়া যায় না।
ঘটনা হলো, প্লাস্টিকের চুবড়ি এসে গিয়ে ডালি কুলোর মত ঐতিহ্যবাহী জিনিসের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা দুই’ই চলে গিয়েছে। এই অবস্থায় ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার তাগিদেই বৈশ্য পাড়ার মানুষের হাত ধরে ডালি-কুলো আজও বেঁচে আছে। তবে এখানকার শিল্পীদের অবস্থা সত্যিই শোচনীয়। তাঁরা মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ডালি-কুলো তৈরি করেন। বাজারে বিক্রি করে যে সামান্য লাভ হয় তার বেশিরভাগটা চলে যায় মহাজনদের সুদ দিতে। ব্যাঙ্ক তাঁদের পাশে দাঁড়ায় না। ফলে লাভ বলে তেমন কিছু থাকে না। তবুও এখানকার রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্মকে আঁকড়ে ধরেই বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন।
পিয়া গুপ্তা