এক আদিবাসী ঘরের মেয়ে কবিতা সরেন। বর্তমানে তিনি একজন গৃহবধূ সঙ্গে এক বাচ্চার মা। স্বামী নিরঞ্জয় মুর্মুব পেশায় একজন ভাগচাষী। অভাবের সংসারে যেখানে তাদের দিনা না দিন খাওয়া করতেই সময় কেটে যায় সেখানে ফুটবল খেলা মানে বিলাসিতা। জীবনের ঝড় ঝাপটা ঝঞ্ঝা কম বয়ে যায়নি তাদের সংসারের উপর দিয়ে। তবুও ফুটবল খেলার প্রতি যে ভালোবাসা তা কমেনি বরং বেড়েই চলেছে। বর্তমানে কবিতা শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের মহিলা ফুটবল দলের একজন অন্যতম স্ট্রাইকার। ফুটবল খেলে তার যা আয় হয় তাই দিয়েই চলে তাদের সংসারের একটা বড় অংশ।
advertisement
জাঙ্গিপাড়া থানার হিজুলি গ্রামের শ্বশুর বাড়ি কবিতা সোরেনের। স্বামী নিরঞ্জয় মুর্মু কিন্তু প্রথম থেকেই একটি বড় সাপোর্ট কবিতার।
প্র্যাকটিস থেকে শুরু করে মানসিক সাপোর্ট সবসময়ই তার স্বামী পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তার স্ত্রী এর লড়াইয়ের। বছর ২৬ এর কবিতা প্র্যাক্টিস এর জন্য কলকাতার মাঠে যান। বাড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে তাকে আসতে হয় নিকটবর্তী রেল স্টেশন হরিপালে। প্র্যাক্টিস ছেড়ে বাড়ি ফিরে সংসার সামলানো। সঙ্গে সুযোগ পেলে মাঠে গিয়ে স্বামীর সঙ্গে চাষবাসেও হাত লাগান কবিতা।
আরও পড়ুন: চাকরি নিয়ে বিরাট ঘোষণা করলেন মমতা! ৩ ফেব্রুয়ারি নিয়েও বড় ডাক, কোন কোন পদে চাকরি?
২০২৩ সালে মহিলা ফুটবলার কন্যাশ্রী কাপে শ্রীভূমির হয়ে এবছর দাপটের সঙ্গে আটটা গোল করে। শ্রীভূমি এফসির হয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কবিতা। ২০২২২ সেও ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের জার্সি গায়ে কন্যাশ্রী কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আগামীদিনে ইচ্ছা ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলে জায়গা করে নেওয়া। কবিতা জানায় যেহেতু কলকাতায় তার থাকার কোন ব্যবস্থা নেই তাই এই পরিশ্রম করে যেতে হবে তাকে। সে আরও বলে \”আমি শ্রীভূমি এফসির সুজাতা করের কাছেই প্র্যাক্টিস করছি। পরবর্তী লীগের জন্য ক্যাম্প শুরু হবে ডাক পড়েছে আমার । আগামী দিনের আমি চাই ইন্ডিয়ার জার্সি গায়ে দিয়ে মহিলা ফুটবল দলের হয়ে খেলতে। আমি যদি কিছু করতে পারি অন্যান্য মেয়েরাও আমাকে দেখে এগিয়ে আসবে। স্বামীর চাষবাস ও খেলে যে টাকা পাই তাই দিয়ে আমাদের কোনরকমে সংসার চলে যায়। খেলে কিছু করতে পারব না । যদি এই খেলা থেকে চাকরি সুযোগ এলে খুব সুবিধা হয়।তাহলে সংসারে সচ্ছলতা ফেরে”।
আরও পড়ুন: জেলে অনুব্রত মণ্ডল, সেই ‘কেষ্ট’কে ঘিরেই বোলপুরে বিরাট কাণ্ড! কীসের ইঙ্গিত?
কবিতার স্বামী নিরঞ্জয় মুর্মু নিজে একটা সময় সাইয়ের আবাসিক ফুটবলার ছিলেন। নিজের খেলা চালিয়ে যেতে পারেনি। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা থেকেই বিয়ের আগে থেকেই কবিতাকে উৎসাহ দিত। নিরঞ্জয় বলেন, “আমি চাষ বাস করি সেরকম আমার আয় নেই। কবিতা আমায় অনেকটাই সাহায্য করে। খেলার দরুন যে টাকা-পয়সা পাওয়া যায় সবকিছুই সংসারের জন্য খরচ করে কবিতা । মহিলা ফুটবলার হওয়ায় প্রথমদিকে আমাদের গ্রামের প্রতিবেশীও আমার মাও খেলা নিয়ে অনেক বিরোধিতা করেছে। আগামী দিনে আমরা চাই কবিতা ইন্ডিয়া টিমের জার্সি পড়ে ফুটবল খেলুক। আমাদের কাছে এটাই গর্বের ব্যাপার।সকলের কাছেই আমার আবেদন খেলাধুলায় ক্ষেত্রে অনেক চাকরি হয়। যদি কোনরকম চাকরি সুযোগ হয় ,তাহলে আগামী দিনে অন্যান্য মেয়েরাও উৎসাহ পাবে”।
—- রাহী হালদার