বসন্ত রোগের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পাওয়ার আশায় গ্রামবাসীরা মা শীতলার শরণাপন্ন হতেন, আর তাঁর কৃপা লাভের আশায় নানাবিধ ধর্মীয় আচার পালন করতেন। বিশেষত ফাল্গুন মাসের সংক্রান্তি তিথিতে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় শীতলা মায়ের আরাধনা শুরু হয়। সেই সময় গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করতেন যে, যথাযথ উপাচারে দেবীর পুজো করলে বসন্ত রোগের প্রকোপ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সেই বিশ্বাস আজও অটুট রয়েছে, আর তাই কয়েক শতাব্দী ধরে বিশেষ দিনে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে শীতলা মায়ের পূজা।
advertisement
আরও পড়ুন: রাশি রাশি ফুলে রাঙা চারপাশ, ‘আগুন’ নেভার আগে ছুঁয়ে আসুন পলাশবন! জীবনে ভুলতে পারবেন না…
এই প্রসঙ্গে পুজো কমিটির সেক্রেটারি সৌভাগ্য রাজবংশী বলেন, “এটা খুবই পুরনো এবং জাগ্রত একটা পুজো। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত বহু মানুষ আসেন পুজো দেওয়ার জন্য।”দোল পূর্ণিমার কারণে এবারের পুজো আরও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সাধারণত পুজোর দিনে প্রচুর ভক্তের সমাগম ঘটে, তবে দোল উৎসবের কারণে এবারের তুলনায় পূণ্যার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম ছিল। তবুও ভোর থেকে শুরু হয় দেবীর পুজো, আর পূর্বস্থলী স্টেশন সংলগ্ন শীতলা মন্দিরে একে একে জড়ো হতে থাকেন ভক্তরা। পুজোর আনুষ্ঠানিকতা পরিচালনা করেন অভিজ্ঞ পুরোহিতরা, যাঁরা নির্দিষ্ট মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে দেবীর কাছে প্রার্থনা জানান ভক্তদের কল্যাণ ও সুস্বাস্থ্যের জন্য।”
আরও পড়ুন: ‘রং মেখে মেয়েদের সঙ্গে…’, রাজ কাপুরের বিখ্যাত হোলি পার্টিতে কী হত জানেন? মুখ খুললেন রণধীর
প্রতি বছরের মতো এবারও পুজোর দিন ভক্তদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরপিএফ (রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স) ও জিআরপি (জেনারেল রেলওয়ে পুলিশ) বিশেষ নজরদারি চালায়। মন্দির প্রাঙ্গণ এবং আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যাতে পূণ্যার্থীরা নির্বিঘ্নে পূজার্চনা সম্পন্ন করতে পারেন। সকাল থেকেই উপস্থিত ছিলেন পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়, যিনি ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং পূজার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। পাশাপাশি, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনও যথেষ্ট সক্রিয় ছিল, যাতে কোনও বিশৃঙ্খলা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। এই উৎসবকে ঘিরে বসে বিশাল মেলা, যা টানা সাত দিন ধরে চলে।
এই মেলাকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম হয়, যার ফলে আশপাশের এলাকা এক অন্যরকম প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে ওঠে। বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যায় হরেক রকম সামগ্রী– খেলনা, মিষ্টান্ন, পোশাক, গৃহস্থালির সামগ্রী ও ধর্মীয় উপকরণ। মেলার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে শিশুদের জন্য নাগরদোলা এবং বিভিন্ন রাইডের ব্যবস্থাও থাকে।কয়েক শতাব্দী ধরে চলে আসা এই উৎসব আজও ভক্তদের হৃদয়ে একইরকম আবেগ ও শ্রদ্ধা জাগিয়ে রেখেছে। বসন্ত রোগের প্রকোপ কমে গেলেও, শীতলা মায়ের প্রতি মানুষের আস্থা ও ভক্তি বিন্দুমাত্র কমেনি।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী





