দিনু দাদুর নার্সারিতে ছোট্ট পাত্রের মধ্যে রাখা বেশ কিছু গাছ রয়েছে। যদি সেই গাছগুলিকে একটু ভালভাবে লক্ষ্য করা যায় তাহলে কোনও গাছকে দেখে মনে হবে অজগর সাপ বসে রয়েছে, আবার কোনও গাছকে মনে হবে হাঁস, কোনওটাকে ব্যাঙ, আবার কোনও গাছকে দেখলে মনে হবে গণেশ ঠাকুর।
সত্যিই দিনু দাদুর হাতের ছোঁয়ায় এই গাছগুলি যেন এক অন্য রূপ, অন্য মর্যাদা পেয়েছে। আসলে এটা হল ‘ বনসাই ‘ শিল্প । ‘বনসাই’ হল এক জীবন্ত ভাস্কর্য৷ বৃক্ষ জাতীয় গাছকে তার আকৃতি ঠিক রেখে সেগুলোর নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যসহ বিভিন্ন প্রকার টবে ধারণ করাই এই শিল্পের নমুনা। শুধু তাই নয়, গাছের মূল বা শাখা দিয়ে নানা আকৃতিকে ছোট্ট টবের মধ্যে তৈরি করার নামই হল ‘বনসাই’।
advertisement
দেবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ওরফে দিনু দাদু জানিয়েছেন , “আমাদের জায়গা এখন সংক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছে। তাই সীমিত ভাবে মনটাকে ব্যয় করার জন্য রূপদান করার জন্য নিজের মন থেকে এইগুলো তৈরি করা । সেখানে কখনও মনে হয়েছে এটা আমার কাছে একটা হাসের আদল, আবার কোনওটা সাপের আদল। এইগুলি সবই মানসিক পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনাটা বৃক্ষ জগতের মধ্যে। যেমন সমস্ত রকম বৃক্ষ প্রকৃতির ইচ্ছায় রয়েছে সেরকমই এই গাছও প্রকৃতির ইচ্ছায়। আমার শুধু মন রয়েছে। এই শিল্পকে বলা হয় বনসাই শিল্প।”
কাটোয়ার পানুহাটে নিজের সাজানো নার্সারিতে ‘বনসাই’ শিল্প গড়ে তুলেছেন দিনু দাদু। নিজের হাতের জাদুতে তৈরি করেছেন বনসাই শিল্পের দারুণ দারুণ গাছ । ছোট থেকেই গাছের প্রতি নেশা ছিল, সেই নেশা আজ পেশায় পরিণত হয়েছে। তবে গাছের প্রতি ভালবাসা না থাকলে এই ধরনের কাজ করা হয়ত সম্ভব নয় । বর্তমানে দিনু দাদু বাড়িতেই সংরক্ষণ করেছেন নানা প্রজাতির গাছ৷ আর এমন আজব শিল্পকর্ম দেখতে দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসছেন।
তিনি কলকে গাছকে কাঁকড়ার মত রূপ দিয়েছেন৷ শ্বেত শিমুল গাছলে টবের মধ্যে অজগর সাপের রূপ দিয়েছেন। পলাশ গাছকে দিনু দাদু তাঁর হাতের শিল্পকর্মের মাধ্যমে ব্যাঙ এর রূপ দিয়েছেন। এইরকম আরও অনেক গাছকে বিভিন্ন ধরনের রূপ দিয়েছেন দিনু দাদু। নিজেদের বাড়ি অথবা ফ্ল্যাটের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে এখন এই গাছ কয়েক হাজার টাকা দামেও বিক্রি হচ্ছে। বহু জায়গা থেকে অনেকেই এখন আসছেন দিনু দাদুর এই বনসাই শিল্পের গাছ সংগ্রহ করতে ।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী