এই পদ্ধতিতে ধান, কচু, ঝিঙে, কুমড়ো, শিম, করলা, লঙ্কার মতো নানান ফসল একসঙ্গে উৎপাদন হয়। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা সহ দার্জিলিঙের বহু পাহাড়ি সম্প্রদায়ের কাছে এটি ছিল খাদ্যের নিরাপত্তা ও জীবিকার একমাত্র ভরসা। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। আধুনিক কৃষির প্রসার, বন সংরক্ষণের আইন, মাটির উর্বরতা হ্রাস, খরা এবং বারবার পাহাড়ি ধস, সব মিলিয়ে এই প্রাচীন কৃষিপদ্ধতি চরম সঙ্কটে।
advertisement
আরও পড়ুন : রাত নামলে শুরু হচ্ছে ওদের তাণ্ডব, যা খুশি, তাই করছে ওরা! চিন্তায় ঘুম নেই চোখে
নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটির টি সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. চন্দ্রা ঘোষ জানালেন, “পাহাড়ে উন্নয়ন প্রকল্প, রাস্তা নির্মাণ, বড় কাঠামো তৈরি, এসবের ফলে জমি নষ্ট হচ্ছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘন ঘন ধস, যা সরাসরি জুম চাষের জমি ধ্বংস করছে।” অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইন্দ্রজিৎ রায় চৌধুরী মনে করেন, “গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধিই জুম চাষের সবচেয়ে বড় শত্রু। খরার প্রভাবে বনভূমিতে আগুন লাগছে, ফলে বহু জুম জমি একসঙ্গে শেষ হয়ে যাচ্ছে।”
আরও পড়ুন : বান্ধবীর প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে ফেঁসেছিলেন! এবার তিন ছাত্রের সঙ্গে যা করল তাঁর পরিবার, শুনলে হাঁ হয়ে যাবেন
পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে এখনও প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে এই চাষ হয়। কিন্তু দার্জিলিঙে তার বিস্তার ক্রমশ কমছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যদি এভাবে চলতে থাকে, আগামী দিনে পাহাড় থেকে জুম চাষ হয়তো পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
জুম চাষ শুধু একটি কৃষিপদ্ধতি নয়, বরং পাহাড়ি নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও জীবনধারার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, ধস, বনভূমি সংকোচন ও আধুনিক উন্নয়নের চাপে এই প্রাচীন কৃষিপদ্ধতি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে। এখন প্রয়োজন সঠিক নীতি ও গবেষণার মাধ্যমে একদিকে টেকসই কৃষিপদ্ধতি গড়ে তোলা, অন্যদিকে পাহাড়ি সমাজের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখা। না হলে আগামী প্রজন্মের কাছে জুম চাষ হয়ত শুধুই ইতিহাসের পাতায় সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে।