তারপর দীর্ঘ বছর কেটে গিয়েছে, পালা বদল ঘটেছে সরকারের। কিন্তু প্রাণ বাঁচানো সিরাজুলের কথা মনে রাখেননি মমতাও। এমনই আক্ষেপের সুর চাকরি হারানো পুলিশ কর্মীর গলায়। তবে এখনও বিশ্বাস করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে আবারও ফিরে পেতে পারেন চাকরি। সেই আশাতেই দিন গুজরান করেন সিরাজুল। চাকরি হারালেও তাই এখনও সযত্নে রেখে দিয়েছেন পুলিশের উর্দি।
advertisement
আরও পড়ুন: মণিপুরের মেয়েদের সঙ্গে যা হয়েছে তা ক্ষমাহীন, কাউকে রেয়াত নয়: প্রধানমন্ত্রী মোদি
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গাইঘাটা থানার অন্তর্গত ইছাপুর এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভদ্রডাঙার বাসিন্দা সিরাজুল হক মণ্ডল। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাইয়ের তৎকালীন কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সচিত্র পরিচয়পত্রের জন্য মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন। সেদিন মিছিল করে যখন মহাকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ কংগ্রেস নেতাকর্মীরা, ২৭ বছরের তরতাজা কনস্টেবল সিরাজুল তখন হাতে মাস্কেট নিয়ে ডিউটি সামলাচ্ছেন।
সেই সময় কলকাতা পুলিশের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার দীনেশ বাজপেয়ীর নির্দেশে হঠাৎই লাঠিচার্জ শুরু করে বাম সরকারের পুলিশ। চোখের সামনে বিরোধী নেত্রীকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখে স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসার নির্মল বিশ্বাসের নির্দেশে কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল সিরাজুল হক মণ্ডল নিজের সার্ভিস রিভলভার তাক করেছিলেন সুপিরিয়র দীনেশ বাজপেয়ীর দিকে। কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-কে বাঁচাতে তখন কলকাতা পুলিশের তৎকালীন কনস্টেবল সিরাজুল চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘স্যার এই অত্যাচার থামান। নাহলে আমি আপনাকে গুলি চালাতে বাধ্য হব।’ হতভম্ব হয়ে যান ওই পুলিশ কর্তা, ঘটনাটি ঘটে কলকাতার ব্রাবোন রোডে।
আরও পড়ুন: ২১ জুলাই বড় কোনও চমক দেবেন অনুব্রত? তিহাড়ে গুঞ্জন, কেষ্টর কামব্যাক কবে!
এরপরই, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তার বিরুদ্ধে যাওয়ায় তিন বছর ধরে চলা মানসিক অত্যাচার শেষে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় সিরাজুলকে। বেশ কিছুদিন চলে আদালতে দড়ি টানাটানি এবং বিভিন্ন দফতরে দফতরে চাকরি ফিরে পাওয়ার দরবার। অবশেষে টাকার অভাবে আদালতের দরজায় যাওয়া বন্ধ করে দেন চাকরি হারানো সিরাজুল। এখন ভাঙাচোরা দরমার বেড়ার উপর টিনের চালা দেওয়া ঘরে মা ও বোনকে নিয়ে কোনও রকমে জীবন চালান সিরাজুল। দিনমজুরির কাজ করে পরিবারের মুখে তুলে দেন খাবারটুকু।
চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় কখনও নগর উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে, তো কখনও স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে গিয়েও গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে এসেছেন সিরাজুল। দিদি বলেছিলেন দেখবেন। ২০১৯-এর পরও কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক বছর। এখনও কোনও ডাক আসেনি সিরাজুলের। শহিদ দিবসের আগে তাই চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় আরও একবার আক্ষেপের সুর শোনা গেল মমতাকে বাঁচিয়ে চাকরি হারানো সিরাজুলের গলায়। নিজেকে জীবন্ত শহিদ আখ্যা দেওয়া সিরাজুল হক মণ্ডল-সহ তাঁর অসুস্থ বৃদ্ধ মা আজও ‘মমতা’র আশায় দিন কাটাচ্ছেন।
Rudra Narayan Roy