রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এসে ছোট থেকেই আদর যত্নে বড় করা ফুচকার মৃত্যু যেন নড়িয়ে দিয়ে গেল গোটা পরিবারকে। দত্তক নেওয়া ফুচকার সব ঠিকঠাক থাকলেও হঠাৎ করেই কিছুদিন ধরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কিছুই খাচ্ছিল না ফুচকা (বিড়াল)। পশু চিকিৎসক কে দেখানোর পর তার পরামর্শ অনুযায়ী, এরপর দমদম পার্কের ওইল্যাব থেকে সিবিসি ও হিমোপ্রোটোজোয়া পরীক্ষা করানো হয়। যার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। বিড়ালের স্বাস্থ্যের উন্নতি না হওয়ায় আবারও পিসিআর টেস্ট করানো হয় ওইল্যাব থেকেই। তারও রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এরপর পশু চিকিৎসক গোপাল সামন্ত কে দেখানো হয় ফুচকাকে। কোনভাবেই বিড়ালটির স্বাস্থ্যের উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে তৈরি হয় বিভ্রান্তি। এরপরেল্যাবের দেওয়া রিপোর্টে তৈরি হয় সন্দেহ।
advertisement
কেভিডিল এবং এএইচপিএল থেকে একই পরীক্ষা করানো হয়। তারপরই দেখা যায় রিপোর্টগুলি হিমোপ্রোটোজোয়ার জন্য পজিটিভ এসেছে। ততদিনে প্রাণঘাতী সংক্রমণ রোগ অনেকটাই ছড়িয়ে পরেছে ফুচকার শরীরে। ভুল ডায়গনিস্টিক রিপোর্টের কারণে চিকিৎসায় বিলম্ব ঘটায়, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে প্রিয় পোষ্য ফুচকা। এরপরই, দমদম পার্ক এর ওই ল্যাবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ফুচকার মৃত্যুর বিচার চাইতে রাস্তায় নামেন সায়ন্তন মুখার্জী। এরপরই সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে প্রায় সাড়ে সাতশ জন পোষ্য মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। যারা এখানে ভুল রিপোর্টে জেরে হারিয়েছেন তাদের পোষ্যদের।
কখনো দেখা গেছে ভুল রিপোর্ট, কখনো আবার নাম বিভ্রাটের জেরে ঘটেছে রিপোর্টের অদলাবদলি। অভিযোগ জানাতে বেলগাছিয়া ভেটেরিনারি কাউন্সিলের সাথে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে জানানো হয়, ভেটেরিনারি ডাক্তারদের জন্য একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামো থাকলেও, ভেটেরিনারি ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরিগুলির জন্য তেমন কিছুই নেই। শুধুমাত্র একটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে একটি ভেটেরিনারি ডায়াগনস্টিক ল্যাব খোলা যায়। এছাড়া বিশেষ কোনো সরকারি স্বীকৃতির প্রয়োজন হয় না বলেই জানা যায়। বিষয়টি পশুপ্রেমী মেনকা গান্ধীর নজরে আসতেই বিষয়টি নিয়ে তিনি সোচ্চার হন।
আরও পড়ুনঃ ‘দ্য এপিসেন্টার’ স্ক্রিপ্ট এনে দিল সুলতান পদমসি পুরষ্কার
অবশেষে ফুচকার মৃত্যুর তদন্তে ডাঃ অনিমেষ সিকদার যুগ্ম পরিচালক, প্রাণী সম্পদ দফতর একটি কমিশন শুরু করেছেন বলে জানা গিয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, টাকা নিয়েও কেন মিথ্যে ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে! নিয়ন্ত্রক সংস্থার অভাব এবং রাজ্য সরকারের নজরদারির অভাবেই কি ঘটছে এই কান্ড! এমনকি, রক্তের নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও অনভিজ্ঞ প্যারাভেটদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন সায়ন্তন।
আরও পড়ুনঃ ইলেকট্রিকের তারে জ্বলে উঠছে আগুন! আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারা
পাশাপাশি, যখন পোষ্য প্রাণীদের শারীরিক পরীক্ষার জন্য ল্যাবে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন ল্যাবের টেবিলগুলিও অপরিষ্কার থাকে। ফলে, প্যানলিউকোপেনিয়ার মতো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস সংক্রমণ অধিকাংশেই বেড়ে যায়। বিষয়গুলি নিয়েই পোষ্য প্রাণী ফুচকার মৃত্যুর বিচার চাইতে লড়াই করছেন সায়ন্তন মুখার্জী। আর তার সাথেই বিষয়টি নিয়ে আওয়াজ তুলেছেন আরও পশুপ্রেমীরা।
Rudra Narayan Roy