মালদহ দক্ষিণ দিনাজপুর সীমান্তবর্তী গ্রাম মদনাবতী। এই গ্রামে একটি বিশাল দিঘির পাড়ে আজও রয়েছে উইলিয়াম কেরি সাহেবের নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ। অবহেলায় অনাদরে পড়ে রয়েছে ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাস। নীলকুঠি পুরোটাই ভেঙ্গে পড়েছে, আগাছায় ভরে রয়েছে চারিদিক। তারি মাঝে উঁকি মারছে কেরি সাহেবের নীলকুঠির দালানের ইট।
আরও পড়ুনঃ মুখোমুখি দুই বাইকের সংঘর্ষে মৃত এক, গুরুতর আহত আরও একজন
advertisement
নেই কোন প্রশাসনিক উদ্যোগ, যার ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামের এই ইতিহাস। স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দারা আজও আগলে রয়েছে ব্রিটিশ শাসনের এই ইতিহাসকে। তবে রক্ষা করতে অনেকটাই ব্যর্থ, কারণ এতদিনেও প্রশাসনের তরফ থেকে কোনরকম সংরক্ষণের ব্যবস্থাটুকু করা হয়নি।
মালদহ শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে বামনগোলা ব্লকের মদনাবতী পঞ্চায়েত। এই মদনাবতী গ্রামে রয়েছে, কেরি সাহেবের নীলকুঠি। জেলার ইতিহাসবিদদের মতে, শ্রীরামপুরে যাওয়ার আগে প্রথম মদনাবতি নীলকুঠির দায়িত্বে ছিলেন উইলিয়াম কেরি। তিনি একজন খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারক ছিলেন। সে সময় মদনাবতী গ্রাম একেবারেই প্রত্যন্ত।
আরও পড়ুনঃ কাজে বেরিয়ে আর ফেরা হল না! মাঝ রাস্তাতেই নৃশংস পরিণতি ব্যক্তির
এই এলাকার মানুষের শিক্ষা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে উন্নয়নের জন্য প্রথম কাজ করা শুরু করেছিলেন উইলিয়াম কেরি। কথিত আছে উইলিয়াম কেরি এখানেই প্রথম ছাপাখানা তৈরীর প্রচেষ্টা করেন। বাইবেল বাংলায় অনুবাদ করার জন্য ছাপাখানা তৈরীর প্রয়োজনীয়তা হয়েছিল। যদিও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
মদনাবতী গ্রামে থাকার সময় মারণ রোগে উইলিয়াম কেরি সাহেবের ছেলের মৃত্যু হয়। এখনো মদনাবতী গ্রামে সেই সমাধি রয়েছে। ছেলের মৃত্যুর পরেই এখান থেকে চলে যান উইলিয়াম কেরি। স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দারা কেরি সাহেবের এই নীলকুঠিকে বাঁচানোর অপ্রাণ আর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুনঃ ফুঁসছে নদী, লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই চলছে ঝুঁকির নৌ পারাপার
প্রশাসনের নজরে আনতে ও পর্যটকদের কাছে নীলকুঠি আকর্ষণীয় গড়ে তুলতে প্রতিবছর শীতের মরশুমে গ্রামের বাসিন্দাদের উদ্যোগে আয়োজন করা হতো মেলার। কেরী সাহেবের নীলকুঠিকে ঘিরে এই মেলার আয়োজন করতেন স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দারা। কয়েক বছর ধরেই এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কেরি সাহেবের এই মেলায় দূর দূরান্তের বহু মানুষ আসতেন।
তবে প্রশাসনের নজর তারপরও পড়েনি। এখনো অনাদরে পড়ে রয়েছে শাসনের জ্বলন্ত ইতিহাস। জেলার এক ইতিহাস প্রেমী সৌমেন্দু রায় বলেন, অনেকেই আসেই উইলিয়াম কেরির ছেলে পিটার কেরির সমাধি বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে। বহু ঐতিহাসিক আসেন এখানে। কিন্তু সেই হিসাবে প্রশাসন এই ঐতিহাসিক নিদর্শনের কোন সংরক্ষণ করছেনা। প্রশাসনের কাছে আবেদন এটির সংরক্ষণ করার।
হরষিত সিংহ