পুরাতন মালদহ ব্লকের এক অখ্যাত গ্রাম বিনতারা। নারায়ণপুর থেকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা ধরে ১৯ কিলোমিটার আসলে পড়বে এই গ্রাম। গাজোল থেকে দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। এই গ্রামে আসলেই দেখা মিলবে এক পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ময়ূরের। এমনি সময় লোকালয় বা জঙ্গলে ঘুরে বেড়ালেও বর্ষাকালে সকাল এবং বিকেলে পেখম মেলে নাচতে দেখা যায় এই ময়ূরকে। গ্রামের প্রায় প্রতিটি মানুষই এই দৃশ্য দেখেছেন। সকলেই খুব ভালোবাসেন এই ময়ূরকে। হঠাৎ এই গ্রামে ময়ূর দেখা দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। গ্রামের বাসিন্দারা ময়ূরের রহস্য প্রকাশ্য নিয়ে আসেন। প্রায় আট বছর আগেকার কথা।
advertisement
আরও পড়ুন: প্লাস্টিক বর্জনে পড়ুয়াদের সচেতন করতে স্কুলে বিতর্ক সভা, আয়োজনে ব্লক প্রশাসন
গ্রামের এক আদিবাসী যুবক তালা মুর্মু কোথা থেকে দুটি ময়ূরের ডিম নিয়ে এসেছিলেন। তাদের বাড়িতে মুরগি ছিল। বাচ্চা ফোটানোর জন্য মুরগির ডিমের সাথে ময়ূরের দুটি ডিম রেখে দিয়েছিল। মুরগি তা দিয়ে সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফোটায়। বাচ্চাগুলো খুব ছোট ছিল তখন মুরগির বাচ্চার সাথেই ঘুরে বেড়াতো। প্রথমে গ্রামের লোক কিছুই বুঝতে পারেননি। কিন্তু বাচ্চাগুলো বড় হতেই ময়ূরের চেহারা ধারণ করতে শুরু করে। প্রথমে তালা মুর্মুর বাড়ির আশেপাশেই ময়ূর দুটি থাকতো। কিন্তু বড় হতেই তারা বাড়ি ছেড়ে গ্রামের ঝোপঝাড় জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে থাকে। ছয় মাস বয়সে একটি মারা যায়। একটি এখনো রয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘরের মধ্যে বস্তা বস্তা টাকা! বেহালার ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার অর্পিতা মুখোপাধ্যায়
বাড়ি ঘরের আশেপাশেই ঘুরে বেড়ায়। রাতে উঠে থাকে কোনও গাছের মগ ডালে। গ্রামের মানুষেরা খাবার দিলে যেমন খায়, তেমনই নিজেও মাঠে-ঘাটে সারা দিনে খুঁটে খুঁটে খাবার জোগাড় করে। বর্ষাকালে সকাল এবং বিকেলে মেঘ উঠলে পেখম মেলে নাচতে দেখা যায় ময়ূরটিকে। তবে প্রতিবছর এই সময় তার পেখমের পালক ঝরে যায়। আবার নতুন করে গজাতে শুরু করে। কিছুদিনের মধ্যেই সেগুলো বড় হয়ে যায়।
বর্তমানে গ্রামের প্রতিটি মানুষ বুক দিয়ে আগলে রেখেছি এই ময়ূরটিকে। গ্রামের খুদেরা নিয়মিত দানাশস্য খেতে দেয়, ময়ূরকে। ময়ূরের সাথে সময় কাটায় তারা। সাধারণত মালদা জেলায় ময়ূর দেখা যায় না। প্রত্যন্ত মালদহের এই গ্রামের এক যুবকের সৌজন্যে ময়ূর দেখা যাচ্ছে মালদহে। তাই এই ময়ূরকে নিয়ে অনেকটাই আবেগ জড়িত স্থানীয়দের মধ্যে।
হরষিত সিংহ