কিন্তু হালখাতা-টা কী? হালখাতার অর্থ হল পুরনো বছরের হিসেব নিকেশ শেষ, নতুন বছরে নতুন হিসেব শুরু। আগে পয়লা বৈশাখের বিকেলে বাঙালি ব্যবসায়ীরা মোটা একটি লাল রঙের খাতা নিয়ে বসতেন। খদ্দেররা এসে পুরনো হিসেব-নিকেশ মিটিয়ে পুরনো খাতা বন্ধ করে দিতেন। বদলে সামান্য কিছু অর্থ জমা রেখে নতুন হিসেবের খাতায় নাম তুলতেন। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির হাত ধরে হালখাতার এই হিসেবের বিষয়টাই সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। এখন বড় থেকে ছোট সমস্ত জায়গায় মূলত কম্পিউটারে হিসেব রাখা হয়। বাঙালি ব্যবসায়ীরাও এই তালিকা থেকে বাদ যান না। আর তাছাড়া সরকারি হিসেব শুরু হয় ১ এপ্রিল থেকে। মানে পয়লা বৈশাখের ১৫ দিন আগে থেকে।
advertisement
আরও পড়ুন: আবার ঝোরার জলে ডুববে চাষের জমি? বাঁধ না হওয়ায় প্রশ্ন ছেত্রি লাইনে
সময় পরিবর্তনের প্রভাবে লাল খেরোর খাতার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে বাঙালির কাছে। আজও হালখাতা হয়, তবে তা হিসেবপত্রের বদলে গ্রাহকদের সঙ্গে মালিকপক্ষের সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপায়ে পরিণত হয়েছে। যদিও রীতি মেনে আজও বেশিরভাগ বাঙালি ব্যবসায়ী পয়লা বৈশাখে লক্ষ্মী-গণেশের পুজো করেন। কিন্তু হিসেব রাখার বিষয়টি না থাকায় লাল খেরোর খাতার চাহিদা ক্রমশ কমছে।
এর ফলে লাল খেরোর খাতা তৈরির সঙ্গে জড়িত অনেকেই পেশা পাল্টে নিয়েছেন। কাগজ-কলম বিক্রেতা অগ্নিবেশ সাহা বলেন, এক সময় রমরমা বাজার ছিল লাল খাতার। বিগত কয়েক বছরে বিক্রি একেবারে তলানিতে। এর ফলে আমাদের ব্যবসাও মার খাচ্ছে। আগে মোটা বড় আকারের খাতা বিক্রি হত। বর্তমানে ছোট আকারের লালখাতা কিনছেন।সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা এখন আধুনিক প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য হচ্ছেন। কম্পিউটারের হিসেব নিকেস রাখার ফলে অনেকটাই ব্যবসায়িক কাজের সুবিধা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে মালদহের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা বাধ্য হচ্ছি কম্পিউটারের ব্যবহার করতে। এখন আমাদের সমস্ত হিসেব কম্পিউটারের মাধ্যমেই হচ্ছে। বিগত কয়েক বছর আগেও আমরা খাতা-কলমে কাজ করেছি। সমস্ত হিসেব থাকত লাল খাতায়। আগে পয়লা বৈশাখের হালখাতায় সকলে দোকানে আসত, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে আড্ডা চলত। সেই দিনগুলো সত্যিই খুব ভাল ছিল। এখনও হালখাতা হয়, তবে তা নামমাত্র। প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য। তবে হালখাতার খাতায় আর কোনও হিসেব রাখা হয় না এখন।
হরষিত সিংহ