এই ভয়ঙ্কর ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন “একটা বিকট শব্দ! পেছনে ঘুরে দেখি ব্রিজ নেই। দৌড়ে ছুটে গিয়ে দেখি চোখের সামনে চাপা পড়ে কাতরাচ্ছিল তিন জন। আমরা কয়েকজন মিলে টেনে বের করি। তারপর আর কিছু মনে নেই। কিছুক্ষণের জন্য দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। পরে স্বাভাবিক হতেই দেখি পুলিশ ঘিরে ফেলেছে গোটা এলাকা। আমার সহ কর্মীদের উদ্ধারের কাজ করছে। তবে কাউকে বাঁচাতে পারিনি। এমনকি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ারও সময়টুকু দেয়নি তাঁরা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ২৩ জনের।”
advertisement
আরও পড়ুন: রাতে ঘরের বাইরে থেকে ভেসে আসছে অদ্ভুত শব্দ! দেখতে গিয়েই হয়ে গেল চরম সর্বনাশ
রতুয়ার চৌদুয়ার গ্রামের সবচেয়ে বেশি পরিযায়ী শ্রমিকেরা এখানে কাজে গিয়েছিলেন। উজির আলী বলেন, “আমরা ছয় জন নীচে কাজ করছিলাম উপরে ছিল ২৪ জন। হঠাৎ বিকট শব্দে ভেঙে পড়ল ব্রিজ। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় সকলের।”
আরও পড়ুন: নিউটাউনে যুদ্ধবিমান! উপচে পড়ছে আমজনতার ভিড়
মালদহের মোট ৩৩ জন শ্রমিক এই ব্রিজ নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ঠিকা সংস্থার কর্মী ইঞ্জিনিয়ার-সহ মোট ৩৯ জনের টিম প্রায় ১০৩ মিটার লম্বা এই রেল ব্রিজটি তৈরির কাজ করছিলেন। প্রতিদিনের মতো দুর্ঘটনার দিন সকাল ৭ টা ২০ থেকে শুরু হয়েছিল কাজ নির্মাণ কাজ।ব্রিজের উপর ছিলেন মোট ২৪ জন শ্রমিক। নীচে ছিলেন ছয় জন শ্রমিক। সকলেই নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
নীচে থাকা শ্রমিকেরা ব্রিজ তৈরি সামগ্রী ওপরে তুলে দিচ্ছিলেন একের পর এক। কাজ চলছিল স্বাভাবিক গতিতে। ব্রিজ থেকে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ১০৪ মিটার। এই উচ্চতায় ৩৩ জন শ্রমিক ও কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার ব্রিজের নয় নম্বর প্লেট জয়েন্টের কাজ করছিলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন অংশে প্লেট বাঁধার কাজও চলছিল। সকলের সেফটি বেল্ট নিয়ে কাজ করছিল। সকলেই নিজেদের মত কাজ করছিলেন হঠাৎ বিকট শব্দে সম্পূর্ণ ব্রিজ ভেঙে পড়ে।
ছয় জন শ্রমিক দৌড়ে গিয়ে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু লোহা-কংক্রিটের মধ্যে চাপা পড়েছিল সকলেই। তিনজনকে উদ্ধার করা গেলেও বাকিদের আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি তাঁদের পক্ষে। সহকর্মীদের হারিয়ে বাড়ি ফিরে তাদের মনে একটাই আক্ষেপ। তিনজনকে উদ্ধার করার পরেও বাঁচাতে পারেনি তাঁদের। চোখের সামনে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা দেখে আতঙ্কিত ৬ জন পরিযায়ী শ্রমিক। চোখের পাতা বুজলেই ফিরে ফিরে আসছে সেই দৃশ্য, তাড়া করে বেড়াচ্ছে সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি।
হরষিত সিংহ