শিলিগুড়ি (Siliguri News) পালপাড়া এলাকায় বিগত ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে মূর্তিকারের কাজ সামলাচ্ছেন বিমল পাল, জোনাকি পালরা। বেশ সুনাম আছে ওঁদের। এত বছর ধরে একই কাজ দক্ষ ও নিপুণতার সঙ্গে সামলে আসছেন তাঁরা। আবার বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি গোষ্ঠ পাল মূর্তির কাছে গণেশ পাল কিছু মূর্তি পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ভালো লাভের আশায়। কিন্তু বড় বরাত যেন মুখ ঘুরিয়েছে গণেশবাবুর কাছ থেকে। একই অবস্থা বিধান রোড এলাকার বাপন সাহা নামে এক দশকর্ম ব্যবসায়ীর। দু' গালে হাত দিয়ে পথ চেয়ে বসে আছেন কখন ক্রেতারা আসবেন এবং ব্যাগভর্তি বাজারের ফর্দ দিয়ে যাবেন।
advertisement
আরও পড়ুন Durga Puja 2021: মৃৎশিল্পীদের হাতে কাজ কম, এবারও কি দুর্গাপুজো-এ থাকবে না চমক?
পালপাড়ার প্রবীণ মৃৎশিল্পী বিমলবাবু জানান, একটা সময় ছিল যখন নাওয়া খাওয়া ভুলতে হতো। সূর্য উদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলত কাজ। আসত বড় বড় বরাত। কোমরে গামছা বেঁধে কাজে নামতে হত তাঁদের। কিন্তু আজ সব অতীত। বিমলবাবু আক্ষেপের সুরে বলেন, 'একসময় বিশ্বকর্মা (vishwakarma puja) পুজোয় কয়েক লক্ষ টাকার বরাত পেতাম। তারপরেই তো দুর্গাপুজো। যেমন খাটুনি ছিল তেমন আমদানিও ছিল ভাল। তবে করোনা (coronavirus) সব শেষ করে দিয়েছে। হাতেগোনা বরাত এসেছে এবার। ঋণ করে মাল কিনে ঠাকুর বানিয়েছি, ঋণের টাকা শোধ করতে পারব নাকি সেই চিন্তাই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।'
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক মৃৎশিল্পী তথা বিক্রেতা তো ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, 'প্রতিবার পুজোর আগে ক্যামেরা নিয়ে আপনারা আসেন। আপনাদেরকে আমরা অনেক কথা বলি। টিভিতে ও পেপারে লেখাগুলি বের হয়। কিন্তু আদতেও আমাদের কি হাল ফেরে? কেউ খোঁজ নেওয়ার থাকেনা আমাদের! দিনের শেষে আমাদেরকে দেখার কেউ নেই।'
আরও পড়ুন Coronavirus| Bengal: উপসর্গহীন করোনা আক্রান্ত রোগী কারা? খোঁজার অভিনব উপায় বীরভূম জেলা প্রশাসনের
একই সুর শোনা গেল দশকর্ম ব্যবসায়ী বাপনবাবুর গলায়। তাঁর কথায়, 'গত বছর পরও না যেভাবে নাড়া দিয়েছে, সেই রেশ এখনও বর্তমান। বাজার উঠেছে, তবে একেবারেই আশানুরূপ নয়। যে হারে মাল স্টক করা হয়েছে তার এক তৃতীয়াংশ বিক্রি হচ্ছে না। মহাজনের কাছ থেকে টাকা ধার করেই মাল তুলেছি। কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না।'
সত্যিই, গতবছর করোনার থাবায় সবই বেরঙিন হয়ে গিয়েছিল। তার এক বছর গড়িয়েছে। বহু পুজো বাতিল করা হয়েছিল। মাথায় হাত পরেছিল মৃৎশিল্পী থেকে ঠাকুরের গয়না প্রস্তুতকারক সহ দশকর্ম ব্যবসায়ীদের। ইদানিংকালে নয়া আতঙ্ক শিশুদের ভাইরাল জ্বর (viral fever)। শতাধিক শিশু এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মৃত্যুও হয়েছে। কিন্তু দোরগোড়ায় পুজো। এরই মাঝে সুদিনের অপেক্ষায় শিলিগুড়ির বিমল-জোনাকি-গণেশ-বাপনরা। এখন পুজোর এই কয়দিনে তাঁদের ঋণের টাকা পরিশোধ হবে কি না, সেই চিন্তায় এখন তাঁরা।