স্থানীয় মানুষ একে “কিশোরনগর গড়” নামেই ডাকেন। ভ্রমণপথও বেশ সহজ, বাসে এলে কাঁথি সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র পাঁচ মিনিট হাঁটা, আর ট্রেনে এলে কাঁথি রেলস্টেশন থেকে টোটো বা অটোয় ১০ মিনিটেই পৌঁছে যাওয়া যায় এই রাজবাড়ির প্রাঙ্গণে। রাজবাড়িতে পা রাখলেই মনে হবে—আপনি হয়ত সময়ের পাতা উল্টে ৩০০ বছর পেছনে চলে গিয়েছেন, এক রাজকীয় যুগে।
advertisement
আরও পড়ুন: ট্রেনে না বাসে? বাজেট সামলে লং উইকএন্ডে ঘুরে আসুন মন্দারমণি, কীভাবে সহজে পৌঁছবেন? জানুন একঝলকে
এই রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রাজা যাদব রাম রায়, যিনি নবাব মীরকাশিমের কাছ থেকে মাজনামুঠা পরগনার জমিদারি লাভ করেন। তিনি ছিলেন দানবীর—প্রজাদের জন্য নিজের সব সম্পদ বিলিয়ে দিতেন। তাঁর মহানুভবতা ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায় ভাইদের কাছে। ষড়যন্ত্রে রাজাকে মুর্শিদাবাদে ডেকে এনে নির্মমভাবে মাটিতে পুঁতে শাস্তি দেওয়া হয়। সেই অবস্থায়ও তিনি জিভের রক্তে বটপাতায় লিখে জমি দান করেন, যা দেখে মীরকাশিম তাঁকে ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
কিন্তু তাঁর উত্তরসূরিরা ছিলেন অত্যাচারী ও লোভী। হতাশ হয়ে রাজা নিজেই নিজের বংশ ধ্বংসের অভিশাপ প্রার্থনা করেন কৌলিন্য ব্রাহ্মণদের কাছ থেকে। ব্রাহ্মণরা রাজি না হলেও অবশেষে বাধ্য হয়ে অভিশাপ দেন, যা পরে বাস্তবে পরিণত হয়। রাজার একমাত্র পুত্র ও নাতনি মারা যান, রাজবংশের পতন ঘটে।
আজও রাজবাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে শোনা যায় অতীতের কাহিনি। কুলদেবতা কৌশরীমোহন জীউর মন্দির এখনো সক্রিয়, এবং তাঁর নামেই গ্রামের নাম—কিশোরনগর। যাঁরা ইতিহাস ভালবাসেন, তাঁদের জন্য কিশোরনগর রাজবাড়ি নিঃসন্দেহে এক অনন্য গন্তব্য—একটি রাজকীয় অতীতের নীরব সাক্ষী।
মদন মাইতি