এই ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপকে অভিনব বলার কারণ হল, এখানে সাধারণ ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন ছেলেমেয়েরাও সমানতালে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ট্র্যাডিশনাল শোটো ক্যারাটে অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের সভাপতি অধ্যাপিকা সেন্সি মৌসুমী পাল বলেন, ‘‘এই প্রতিযোগিতায় বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে ছেলেমেয়েরা অংশগ্রহণ করে তার পাশাপশি সরকারি ও সরকার ঘোষিত বেশ কয়েকটি হোমের মেয়েরাও এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। বেশ কিছু বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন মেয়েরা যারা কোনদিন ভাবতেই পারেনি যে ক্যারাটের মতো আত্মরক্ষামূলক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে, তাদেরকে স্পেশাল ট্রেনিং দিয়ে উপযুক্ত করে ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ। তাদের মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন মেয়েদের অনেকেই গোল্ড সিলভার এবং ব্রোঞ্জ জয় করেছে এই প্রতিযোগিতায় যা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।
advertisement
এছাড়াও হোমের মেয়েরাও এই চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করে তারাও গোল্ড সিলভার এবং ব্রোঞ্জ পদক জয় করে। উল্লেখ্য যে হোমের মেয়েরা আজ পর্যন্ত কোনদিন ক্যারেট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি তাদেরকে মৌসুমী চ্যাম্পিয়ন খেলার সুযোগ করে দিতে পেরেছেন শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আনুকুল্যে।মৌসুমী কলেজে অধ্যাপনা করার পাশাপাশি ক্যারেট নিয়ে গবেষণা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। কলেজে পড়াতে গিয়ে বিশেষ করে মেয়েদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছেন যে, তারা স্বাভাবিক হয়েও বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে রয়েছে। বহু মেয়েরা পড়াশোনা করতে করতেই হারিয়ে গেছে বা হারিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সময়ে।
আরও পড়ুন - ‘কাপ্তান হো তো অ্যায়সা’- অজি বধের ট্রফি রোহিত তুলে দিলেন দলের সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটারের হাতে, ভাইরাল ভিডিও
মৌসুমী এই সমস্ত মেয়েদেরকে কাউন্সিলিং গ্রুমিং এর পাশাপাশি ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে একটা পরিচিতি দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন দীর্ঘদিন ধরে। যেহেতু তিনি ক্যারাটে নিয়ে গবেষণার কাজ করে চলেছেন তাই তার একটাই লক্ষ্য শুধু স্বাভাবিক ছেলে মেয়েরা নয়, বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন ছেলেমেয়েদেরও কাউন্সিলিং গ্রুমিং এর পাশাপাশি কারাটে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের সঙ্গে একই রিঙে সমান তালে খেলানো। মৌসুমী জানান, তার একটাই উদ্দেশ্য বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন শিশুরাও যেন নিজেদের পরিচয় তৈরি করতে পারে, তারা যেন সমাজ থেকে হারিয়ে না যায়। এই ধরনের ছেলে মেয়েরাও যেন নিজেরা উপলব্ধি করতে পারে যে, তারা স্বাভাবিকের মতোই অর্থাৎ আর পাঁচটা সাধারণ ছেলেমেয়েদের মতোই কোন কিছুতে কম না। তারাও যেন ভাবে যে আমরা অনেক কিছুই করতে পারি, আমরাও একজন বড় খেলোয়াড় হতে পারি এই কনফিডেন্স জুগিয়ে তাদেরকে আরো উৎসাহ দিচ্ছেন। এটা অবশ্যই এক অভিনব প্রয়াস। ওই সমস্ত ছেলে মেয়েদের সঙ্গে লড়াইয়ে সামিল মৌসুমি। তিনি আরও বলেন, সমাজের সকল প্রতিষ্ঠিত মানুষের কাছে আবেদন, তারা যেন সমানুভূতির সাথে এই পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের কথা ভাবেন এবং তাদের মধ্যে যে কত সুপ্ত প্রতিভা লুকিয়ে আছে সেগুলিকে আন্তরিকতার সঙ্গে সমাজ সম্মুখে তুলে ধরতে সচেষ্ট হন। তাহলে সমাজের সকল মানুষেরা বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন শিশুদের আর অবহেলার চোখে দেখবে না। শুধু বাংলা নয় বাংলার বাইরেও বিভিন্ন রাজ্যে মৌসুমী কাজ করে চলেছেন নিরলস ভাবে।
আরও পড়ুন - শহরের একটি রাস্তার নাম প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নামে করার নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত ক্রিকেটার এম এস ধোনির মেন্টার শ্রী সত্যপ্রকাশ কৃষ্ণা, সাইনি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রিন্সিপাল নবনীতা গিরি ,আমতা কলেজের প্রিন্সিপাল ডক্টর দেব কুমার মুখার্জি, সুইমিং ও ভলিবল কোচ বদরুদ্দোজা সেখ, গুজারপুর সুরেন্দ্রনাথ বিদ্যালয়ের বিশিষ্ট শিক্ষক শ্রী মোহন পাল ও আরও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
RAKESH MAITY