হুগলির তারকেশ্বরের বাসিন্দা শাহজাহান খাঁ। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি। রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হওয়া যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের সঙ্গে কাজের চুক্তি হয়েছিল তাঁর। শাহজাহানের দাবি, কলেজের সংস্কারের কাজের জন্য তাঁর সঙ্গে ৩৫ লক্ষ টাকার চুক্তি করেছিলূ কুন্তল। অভিযোগ, কথা মত কাজ হলেও মেলেনি প্রাপ্য টাকা। উল্টে, চুক্তি মাফিক কাজ করতে গিয়ে লক্ষাধিক টাকার দেনায় জড়িয়ে পড়েছেন শাজাহান। এই অবস্থায় কুন্তল ঘোষ গ্রেফতার হতেই আরও চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন ওই রাজমিস্ত্রি। কবে কুন্তল তাঁকে টাকা দেবেন? কবে তাঁর দেনা মিটবে? এইসব কথাই ভাবছেন রাতদিন।
advertisement
শাহজাহান নিজে পরিবার নিয়ে একচালা টালির ঘরে থাকেন। দিন আনা দিন খাওয়া সংসার। তাঁর দাবি, বুঝতে পারেননি সরকারি প্রকল্পের নাম করে কুন্তল এইভাবে তাঁর সঙ্গে জালিয়াতি করবেন। দুটো পয়সা লাভের আশায় নিজের সম্পত্তি বন্ধক রেখে টাকা জোগাড় করে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শাজাহান। বউয়ের যাবতীয় গয়না বিক্রি করে দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, মোটা টাকার কাজ হওয়ার পর যা লাভ থাকবে তা দিয়ে আবার স্ত্রীর নতুন করে গয়না গড়িয়ে দেবেন, বন্ধক রাখা সম্পত্তিও ছাড়িয়ে নিতে পারবেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে পাচারের ঠিক আগে ভিন রাজ্যের গাড়ি থেকে উদ্ধার বিপুল ফেনসিডিল
কিন্তু বিধি বাম। শাহজাহান খাঁ-র অভিযোগ, চুক্তি মাফিক ৩৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তাঁকে মাত্র ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা দিয়েছেন দাপুটে তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ! বাকি টাকা চাইতে গেলে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় দেখিয়ে কুন্তল হুমকি দিতেন বলে দাবি শাহজানের। বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ করে দেন তিনি। যদিও ততদিনে ৮৫ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছিল। এরইমধ্যে ইমারতি দ্রব্যের দোকানে প্রচুর টাকার দেনা হয়ে যায়। কিন্তু কুন্তলের হুমকির মুখে পড়ে ভয়ে অন্য কোথাও অভিযোগ জানানোর সাহস পাননি বলে দাবি করেছেন ওই রাজমিস্ত্রি। স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে এবং অন্য জায়গায় কাজ করে ইমারতি দ্রব্যের দোকানের লক্ষ লক্ষ টাকা দেনা এখনও তিনি মাসে মাসে শোধ করে চলেছেন বলে জানান শাজাহান।
শাহজাহানের থেকেই জানা গিয়েছে, হুগলির ধনেখালির ভাণ্ডারহাটির শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছাড়াও ধনেখালিরই মধুপুরে কুন্তল ঘোষের আরও একটি কলেজ আছে। ২০১৬ সালের আগে সেখানে বহু ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করত। যদিও ২০১৬ সালের পর শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায় পুননির্মাণ কাজের জন্য।
আরও পড়ুন: বাংলাকে পথ দেখাচ্ছেন শুভেন্দু, ছেলের দরাজ প্রশংসায় তৃণমূল সাংসদ শিশির
যুব তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কুন্তল ঘোষকে সিবিআই গ্রেফতার করার পর তাঁর একের পর এক কীর্তিকলাপ প্রকাশ্যে উঠে আসছে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার বিষয়টি তিনি একপ্রকার স্বীকার করে নিয়েছেন বলেছি বিয়াই সূত্রে জানা গিয়েছে। এমনকি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নগদে ১৫ কোটি টাকা দিয়েছিলেন বলেও নাকি জানিয়েছেন কুন্তল! এই বিষয়টি নিয়েই এই মুহূর্তে তোলপাড় হচ্ছে রাজ্য রাজনীতি। এরই মধ্যে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় খাটিয়ে সাধারণ রাজমিস্ত্রিকে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠল তাঁর বিরুদ্ধে।
রাহী হালদার