এ দৃশ্য এখন খুব কমই দেখা যায়। হাঁস-মুরগি, হাতঘড়ি, গোলাপের আকারে বানানো বম্বে মিঠাইয়ের স্বাদ এখনও মেলে শিলিগুড়িতে। দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে আজও এই মিষ্টির যোগান দিচ্ছেন ব্যবসায়ী সুনিল চোপাল। বম্বে মিঠাই ফেরি করে প্রায় ৪ যুগ ধরে চলছে সুনীল চোপালের সংসার। খাতায় কলমে তিনি বিহারের বাসিন্দা। কিন্তু প্রায় বছর ৪০ আগে পেটের টানে এসেছিলেন শিলিগুড়ি শহরে।
advertisement
আরও পড়ুন: হোলির শোভাযাত্রায় দুই পক্ষের বচসা, মারের চোটে কান ফাটল যুবকের!
পড়াশোনা না জানায় শহরে এসেও প্রথমে কোনও কাজ পাননি তিনি। এদিকে সংসারের পুরো দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর। নিজের পেটের টান তো ছিলই, একইসঙ্গে পরিবারের সদস্যদের পেটের চিন্তাও ছিল তারই কাঁধে। ফলে কোনও কাজ না পাওয়ায় কী করবেন? কী খাবেন? কিছুই ভেবে পাচ্ছিলেন না। ঠিক তখনই মাথায় আসে মিষ্টি বানানোর কথা। কারণ মিষ্টিই ছিল একমাত্র, যা তৈরির নারী-নক্ষত্র জানা ছিল সুনীল বুর। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন মিষ্টিই বিক্রি করবেন, দোকান না হোক ঘুরে ঘুরেই করবেন।
আরও পড়ুন: পূর্ণিমার চাঁদের আলো মাখা বিশেষ চা পাতা, বাজারে নাম 'মুনলাইট চা'! প্রচুর দাম
ফন্দি আঁটলেন, মিষ্টি বানাবেন, কিন্তু একটু অন্যরকম। যা দেখতেও ভিন্ন, খেতেও হবে ভিন্ন স্বাদের। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে শুরু হল মিষ্টি বানানোর তোড়জোড়। রাতভর মিষ্টি তৈরি করে নেমে পড়লেন ময়দানে। ঘুরে ঘুরে শুরু করলেন মিষ্টি বিক্রি। প্রথম দিন সবটা মিষ্টি বিক্রি না হলেও, কম হয়েছে তাও বলা যায় না। ব্যাস, আর কী? শুরু হল নতুন যাত্রা। সেই করেই পেরিয়ে গিয়েছে ৪০টা বছর।
চিনি, ময়দা, এলাচ এবং বিশেষ ধরণের কিছু উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয় বোম্বে মিঠাই। প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে শুধু মিষ্টিটি নামে বা খেতেই নয়, বাহ্যিক সৌন্দর্য্যেও রয়েছে আলাদাই চমক। নামে বম্বে মিঠাই হলেও, দেখতে হাঁস-মুরগি, গোলাপ আরও বিভিন্ন রকমের হয় দেখতে। যা সহজেই আকর্ষণ করে বাচ্চাদের। আর বিক্রিও বাড়ে। দামেও একেবারে কম। মাত্র ১০ টাকা থেকে শুরু সর্বোচ্চ দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল, ঘুরে ঘুরে মিষ্টি বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের চাহিদা তো মিটিয়েছেনই, সঙ্গে একটি বাড়িও কিনে ফেলেছেন সুনীল বাবু।
স্ত্রী, ও দুই ছেলে নিয়ে সংসার তাঁর। ছেলেরা পড়াশোনা করেন। যদিও তাঁরা এখনও বিহারেই রয়েছেন। সময়ে সময়ে কাজের ফাঁকে যান পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে, সময় কাটাতে। বছরে দুই-তিন বার যাওয়া হয়। সুনীল বাবুর জানান, আগে পায়ে হেঁটেই বিক্রি করতেন। এখন দোসর হয়েছে সাইকেল। সকাল ৯ টায় বাড়ি থেকে বের হন, সারাদিন ঘুরে ঘুরে দিন শেষে বাড়ি ফেরেন। সারা দিনে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মতো আয় হয়। তবে গরমের তুলনায়, শীতের সময় বিক্রি বাড়ে।
অনির্বাণ রায়