বালুরঘাট ছাড়িয়ে সেই সময় যাত্রাপালা পার্শ্ববর্তী অনেক এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল। তখন কলাকুশলীদের সংখ্যা প্রচুর। সাত ও আটের দশকে তখন গ্রামাঞ্চলগুলিতে দর্শকের ঠাসা ভিড়ে যাত্রার মঞ্চ দাপাচ্ছেন শিল্পীরা। বালুরঘাটের সৌখিন নাট্য সংস্থা, পতিরামের ঐক্যতান, বালুরঘাট ব্লকের বানিয়াকুরি গ্রামের অপরূপ সংস্থা তখন চুটিয়ে যাত্রাপালা করে চলছে।
আরও পড়ুন ঃ কন্যাশ্রীর ব্যানারে বালুরঘাটের দুই ছাত্রী! কী নাম তাদের? চিনে নিন এই দুই কন্যাকে!
advertisement
কিন্তু যাত্রাপালার যাত্রা কার্যত শেষ বলে আক্ষেপ যাত্রা শিল্পীদের। এখন কার্যত অতীতের স্বর্ণালী স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন সেই অভিনেতারা। সে এক সময় ছিল। যাত্রার আসরে ভেঙে পড়ত গ্রামের পর গ্রাম। একের পর এক রাত জেগে পালার পর পালা দেখা। যাত্রা তার পুরনো জৌলুস হারাচ্ছিল বেশ কয়েক বছর ধরেই।
উল্লেখ্য বালুরঘাট থেকে ১৫ কিমি দূরে সেওই গ্রাম। সেখানেই বানিয়াকুড়ি এলাকায় এখনও যাত্রার সংলাপ আউড়ে চলেন ৮০ বছরের জ্যোতিষচন্দ্র দাস। এখনও তার হাতে পুরনো রেডিও, সেখানে সারাদিন যাত্রা শুনে দিন কাটান তিনি। তার কথায়, ‘২০১৬ সালে শেষ যাত্রায় অভিনয় করেছি। এখন আমার অপরূপ সংস্থা বন্ধ। সরকারি কোনো ভাতা নেই। কিন্তু দল চালাতে অনেক খরচ হয়। ১৩ বছর বয়স থেকে যাত্রায় অভিনয় শুরু। সেইসব দিন এখনও চোখের সামনে ভাসে। নিজেরাই মঞ্চ বাঁধতাম, খেজুর গাছের ছাল দিয়ে দর্শকের আসন তৈরি করতাম।’
আরও পড়ুন ঃ ফের বাসের ধাক্কায় জখম ২ স্কুল পড়ুয়া! “পুলিশি অপদার্থতার”র অভিযোগ স্থানীয়দের
তারপর আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘সবই স্মৃতির ঘরে সাজানো রয়েছে। এখন মানুষের আর যাত্রা পছন্দ নয়। সরকার চাইলেও এর সুদিন ফেরানো প্রায় অসম্ভব। এখন বিনোদনের মাধ্যম বদলেছে। নাটকের বেশ কয়েকটি রজনী হলেও প্রেক্ষাগৃহে বেজে ওঠে মোবাইলের রিংটোন। মুঠোফোনের রঙ বেরঙের হাতছানিতে মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। বিনোদন খুঁজতে মঞ্চের সামনে বসতে অনীহা।’
নাটকে তবু দর্শক দেখা গেলেও যাত্রা এখন বন্ধ। বহু যাত্রা দল ইতিমধ্যেই বাদের খাতায় নাম লিখিয়েছে। অভিনেতার অভাবে বহু দল লাটে উঠেছে। শিল্পীরা পেটের টানে অন্য পেশার প্রতি ঝুঁকেছে। যাত্রায় লোকসান হতে থাকায় মালিকরাও তল্পিতল্পা গুছিয়ে নিয়েছেন। তবু কিছু এলাকায় যাত্রার দর্শক রয়েছে। এখনও বোয়ালদার বারোয়ারী নাট্য সংস্থা যাত্রার প্রতিযোগিতা করেন। যদিও তাদের শেষ অনুষ্ঠান হয়েছে পাঁচ বছর আগে।
আরও পড়ুন ঃ ডালের নামে পাতে পড়ে জল! অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ঝুলল তালা
দক্ষিণ ডাংগি বারুনী মেলায় এখনো যাত্রাপালা আয়োজিত হয়। বালুরঘাট ব্লকের ডাংগি, বোয়ালদার, পতিরাম, প্রাচ্য ভারতি সহ একাধিক জায়গায় গড়ে উঠেছিল যাত্রার একাধিক দল। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সে সমস্ত দলগুলির চিহ্ন নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র কিছু শিল্পী স্মৃতিগুলো আঁকড়ে ধরে আছেন মাত্র।
সুস্মিতা গোস্বামী