যে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের তিনি পড়িয়েছেন তাদের অনেকেই এখন জীবনেসুপ্রতিষ্ঠিত। কোচবিহার চিত্রকর পাড়ার বাসিন্দা বিষ্ণুপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বর্তমান সময়ে এই জেলার অনেকেরই আইডল হয়ে উঠেছেন। কোচবিহার কলেজের প্রাক্তন এই শিক্ষকের ৭২ বছর বয়সেও তার মনকে যেন ছুঁতে পারেনি বার্ধক্য।
আরও পড়ুন- বয়স মাত্র দশ, গাইডের কাজ করেই প্রকৃতি বাঁচাতে নেমেছে পাহাড়ের সৌরভ
advertisement
বিষ্ণু প্রসাদ মুখোপাধ্যায় জানান, "ছোট থেকেই দারিদ্রতার সাথে লড়াই করে বড় হয়েছি। কলেজে থাকাকালীন পড়ুয়াদের সমস্যাগুলি সামনাসামনি দেখেছি। তাই পড়ুয়াদের পারিশ্রমিক ছাড়াই পড়াশোনা করাব বলে ঠিক করি।"
যখন যে অবস্থায় কোনও শিক্ষক কিংবা ছাত্র তাঁর সাহায্য প্রার্থী হয়েছেন, তখনই তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁদের দিকে। চাকরি জীবন শেষ হওয়ার পর থেকে তিনি বাড়িতেই বিনা পয়সায় পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
শুধু পড়ানোই নয়, পড়ুয়াদের কথা ভেবে তিনি বাড়িতেই তৈরি করেছেন একটি মিনি লাইব্রেরি। সেখান থেকে পড়ুয়ারা দরকার অনুযায়ী বই নিয়ে যেতে পারে।
কোচবিহার কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন বিষ্ণু প্রসাদ মুখোপাধ্যায়। পরবর্তীতে বিভাগীয় প্রধান এবং কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব সম্মেলন তিনি। ২০১০ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন।
তাঁর স্ত্রী ডক্টর অঞ্জলি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে চিত্রকর পাড়ার বাড়িতেই তাঁর বসবাস। একমাত্র ছেলে জার্মানিতে চিকিৎসক। বিষ্ণু প্রসাদ বাবুর কাছে পড়তে আসা এক কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী অনন্যা দাস বলেন, "আমি আজ প্রায় এক বছর ধরে স্যরের কাছে পড়ছি।
অন্যান্য সমস্ত স্টুডেন্টদের মতোই আমারও স্যারের কাছে পড়তে দারুন ভালো লাগে। স্যার একটু অন্যরকম মানসিকতার মানুষ। তিনি যেমন প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে বিনা পয়সায় পড়ান। তুমি দুঃস্থ পড়ুয়াদের টাকা দিয়েও সাহায্য করেছেন। তার কাছে সবাই সমান।"
আরও পড়ুন- বিয়ের মাস পার হল না, ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার স্বামী-স্ত্রীর! মর্মান্তিক ঘটনা হেমতাবাদে
বিষ্ণু বাবুর ছাত্রছাত্রীরা এখন সমাজের বুকে সুপ্রতিষ্ঠিত। কেউ অধ্যাপনা সঙ্গে যুক্ত, আবার কেউ সরকারি কর্মী। আর্থিক সমস্যায় ভুগতে থাকা অনেকের পাশে বট গাছের মতন দাঁড়িয়েছেন তিনি।
আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা পড়ুয়াদের জন্য তিনি দিয়েছেন যাতায়াতের খরচ, টিফিনের খরচ, এমনকি বই পত্রের খরচও। ওনার স্ত্রী অঞ্জলি মুখোপাধ্যায় বলেন, "কলেজের শিক্ষকতার অবসানের পর থেকে তিনি বাড়িতে শিক্ষকতা শুরু করেন। বেশ ভাল লাগে যখন বাড়িতে ছাত্র-ছাত্রীদের আনাগোনা হয়। তাই ওনাকে এই বিষয় নিয়ে সমস্ত ভাবে সাহায্য করে থাকি।"
বিষ্ণু প্রসাদ বাবুর একটাই লক্ষ্য, পড়ুয়াদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া। সেই লক্ষ্যেই অবিচল থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এই শিক্ষক।
Sarthak Pandit