বীরভূমে পরাধীন ভারতে যে সব জায়গায় প্রথম দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম হল দুবরাজপুরের এই মুন্সেফ কোর্ট। এই মুন্সেফ কোর্টেই যা যা ঘটনা ঘটেছিল তা তুলে ধরেছেন সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যাপক পার্থ শঙ্খ মজুমদার।
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর বেলা ১২টা নাগাদ প্রায় ৫০০ জন স্বাধীনতা সংগ্রামী একটি মিছিল করে দুবরাজপুর থানার সামনে আসেন এবং বন্দেমাতরম সহ নানা স্লোগান দেন। এরপরেই তারা উপস্থিত হন দুবরাজপুরের মুন্সেফ কোর্ট প্রাঙ্গণে। সেখানে তারা অবস্থিত ডাকঘর ভাঙচুর করেন। এরপর ১টা নাগাদ মুন্সেফ কোর্ট আক্রমণ করেন তারা। আক্রমণের আশঙ্কায় দরজা-জানলা বন্ধ করে সবাই ভিতরে ছিলেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা ভিতরে প্রবেশ করেন এবং সেরাস্তায় আগুন লাগিয়ে দেন। কাগজপত্র, বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল, পাশের পুকুরে ফেলে দেন।
advertisement
আরও পড়ুন Malda News: ঢাক ঢোল পিটিয়ে হল খুঁটি পুজো, দায়িত্বে শুধুমাত্র মহিলারা
তবে প্রচলিত রয়েছে এই ১ সেপ্টেম্বরই দুবরাজপুর আদালত চত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। কিন্তু গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, এই দুবরাজপুর মুন্সেফ কোর্টের আগেই ২৮ আগস্ট জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ওই দিন সৌরেন্দ্র নারায়ণ সেন এবং শ্রীপতি পাতর-এর নেতৃত্বে প্রায় ৫০০ জন মিছিল করে আসেন এবং মুন্সেফ কোর্ট ও ডাকঘরে উপস্থিত হয়ে পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। এই দুটি ঘটনা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। তারা দুবরাজপুরে নিয়ে এসেছিলেন মিলিটারি। এর পাশাপাশি ব্রিটিশরা দুবরাজপুর এবং হেতমপুরের উপর ১০ হাজার টাকার জরিমানা চাপিয়েছিলেন। এর পাশাপাশি ৫০ জনকে গ্রেফতার করে দুবরাজপুর হাঙ্গামা নামে একটি কেস রুজু করেছিলেন। এদের মধ্যে প্রায় ২৫ জন শাস্তি পেয়েছিলেন যে কারণে এই ঘটনা বীরভূম জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা বলে বিবেচিত হয়।
পাশাপাশি দুবরাজপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারের সদস্য তথা সরকারি আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, "এখানকার এই স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন আমার দাদু শক্তিনাথ মুখোপাধ্যায়। আর ছিলেন পতিত চট্টোপাধ্যায়, শম্ভুনাথ কবিরাজ, হারান খাঙ্গার (আন্দামান সেলুলার জেলে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে তার নাম)। এই দুবরাজপুর হল আমাদের গর্বের জায়গা।"
Madhab Das