রামপুরহাটের সাত নম্বর ওয়ার্ডের মহাজনপট্টি এলাকায় বাড়ি ঈশা গুপ্তের। বর্তমানে নলহাটি হীরালাল ভকত কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি। বাবা সুনীল গুপ্ত বছর তিনেক আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পেশায় তিনি লেবু বিক্রেতা ছিলেন। সঞ্চয় বলে তিনি কিছুই করে যেতে পারেননি। তাঁর মৃত্যুর পরেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে ঈশা ও তার মা মধু গুপ্তের।
advertisement
মা ছাড়াও ঈশার বাড়িতে রয়েছে এক ভাই ও এক বোন। দুজনেই স্কুলপড়ুয়া। এমন অবস্থায় কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না ঈশা ও তাঁর মা মধুদেবী। কারণ ভাল ব্যবসা করতে গেলেও তো মোটা পুঁজির প্রয়োজন। তাই ক্ষমতা না থাকলেও থেমে থাকেনি ঈশা। প্রথম প্রথম জেরক্সের দোকানে সাদা কাগজ বিক্রি করা শুরু করেন তিনি এবং সেখান থেকে যে টাকা আয় হচ্ছিল তাতে মোটামুটি সংসার ও ভাইবোনের পড়াশোনা চলে যাচ্ছিল।
আরও পড়ুন : দেশের সর্বকনিষ্ঠ অঙ্গদাতা! বাবাকে নিজের লিভারের একাংশ দান করে নজির কিশোরীর
কিন্তু ওই টাকায় তাঁর নিজের পড়াশোনা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল ঈশাকে। তাই এর পরই সে নতুন কোনও ব্যবসা করার কথা ভাবেন। কথায় আছে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন চায়ের দোকান করবেন। কিন্তু ইশাকে এই বিষয়ে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি,কারণ তাঁর পরিচিত এক কাকু নিজের বন্ধ থাকা একটি অস্থায়ী দোকান দেয় তাঁকে।
এর পরই শুরু করেন চায়ের দোকান। দেখতে দেখতে তিন সপ্তাহ অতিক্রম করল তাঁর এই দোকান। দোকান খোলার দিন থেকেই কলেজছাত্রীর কাছে চা পান করতে ভিড় জমাচ্ছেন আট থেকে আশি সকলেই। ঈশার চায়ের দোকানের সামনে অনেক পুরনো চায়ের দোকান থাকলেও তার দোকানে খদ্দের আসছেন অনকে বেশি, এমনটাই দাবি তাঁর। আর সেখান থেকে যে সামান্য রোজগার হচ্ছে তা দিয়েই স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন : প্রেমদিবসে রেস্তরাঁয় খাচ্ছে প্রেমিক জুটি, আচমকাই হাজির প্রবীণা, চলল চটি দিয়ে বেদম মার, দেখুন ভাইরাল ভিডিও
পড়াশোনার পাশাপাশি সকালে বেশ কিছু ক্ষণ ও বিকেলে কিছুক্ষণ করে তিনি চায়ের দোকানে সময় দিচ্ছেন। এর পরই সাইকেলে করে বেরিয়ে পড়ছে বিভিন্ন ফোটোকপির দোকানে গিয়ে জেরক্সের সাদা কাগজ বিক্রির টাকা আদায় করতে। হতদরিদ্র পরিবারের এই মেয়ের অদম্য লড়াই দেখে তাকে কুর্নিশ জানিয়েছে অনেকেই।
কলেজছাত্রী ইশা গুপ্ত সে জানান, “আমার উপর গোটা সংসার দাঁড়িয়ে আছে, তাই কিছু একটা করতে হবে সেটা ভেবেই এই দোকান খুলে ফেললাম। এই তিন সপ্তাহ হল, তাই একটু রোজগার কম হচ্ছে। আস্তে আস্তে বাড়বে। এই দোকানের পাশাপাশি জেরক্সের সাদা কাগজ বিক্রি করি। সবাই পাশে রয়েছেন।”
দোকানে চা পান করতে আসা এক চাপ্রেমী জানান, “এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাই। ইচ্ছা থাকলেই যে উপায় হয় সেটা আরোও একবার প্রমাণ করলেন ঈশা।”