Durga Puja 2021 ‍| Traditional Durga Puja: সাড়ে ৩০০ বছরের রীতি মেনে দুর্গাপুজো, শিবপুরের পাল বাড়িতে ১৫ দিন ধরে চলে চণ্ডীপাঠ!

Last Updated:

আধুনিকতার ছোঁয়ায় চাপা পড়ে গেছে বাংলার নানান প্রাচীন দুর্গাপুজোর ইতিহাস (Durga Puja 2021 ‍| Traditional Durga Puja)।

সাড়ে ৩০০ বছরের রীতি মেনে দুর্গাপুজো, শিবপুরের পাল বাড়িতে ১৫ দিন ধরে চলে চণ্ডীপাঠ!
সাড়ে ৩০০ বছরের রীতি মেনে দুর্গাপুজো, শিবপুরের পাল বাড়িতে ১৫ দিন ধরে চলে চণ্ডীপাঠ!
#হাওড়া: আধুনিকতার ছোঁয়ায় চাপা পড়ে গেছে বাংলার নানান প্রাচীন দুর্গাপুজোর ইতিহাস । তবুও হাওড়া জেলার শহরাঞ্চলে যে সমস্ত প্রাচীন বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোগুলো এখনও পর্যন্ত সেই প্রাচীন প্রথা মেনে ঐতিহ্যের সাথে চলে আসছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো শিবপুরের পাল বাড়ির দুর্গাপুজো । দেশে ব্রিটিশ শাসনেরও আগে থেকে শুরু হওয়া এই পুজো নির্দিষ্টভাবে কত বছরের পুরনো তা বলা সম্ভব না হলেও আনুমানিক প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে পাল বাড়ির বংশধরদের হাত ধরে চলে আসছে এই পুজো । বাড়ির তিন খিলানের প্রাচীন অপ্রশস্ত ঠাকুরদালানটিই তার প্রমাণ ।
প্রতিটি বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোর আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকলেও পালবাড়ির দুর্গাপুজো অন্যান্য বনেদি বাড়িগুলির থেকে অনেকটাই আলাদা । " মহিষাসুরমর্দিনী " নয় এই বাড়িতে দেবী দুর্গা " অভয়া " রূপে পূজিত হন । দশভুজার বদলে দেবী দুর্গার দ্বিভুজা রূপটি পরিলক্ষিত হয় । অর্থাৎ এই বাড়ির দুর্গা প্রতিমায় দেবী দুর্গার মূর্তিতে দুটি হাত থাকে । হাত দুটিতে কোনো অস্ত্র থাকে না । মায়ের একটি হাতে থাকে অভয়া মুদ্রা , যার মাধ্যমে তিনি যেন সকল মনুষ্যকুলকে আশীর্বাদ করছেন । অন্য হাতে থাকে একটি ফল ও প্রস্ফুটিত পদ্ম । দেবী দুর্গা এখানে সিংহবাহিনী হলেও প্রতিমার সাথে কোনো মহিষাসুর থাকে না । একচালা দুর্গা প্রতিমার দু পাশে থাকে সরস্বতী , লক্ষী , কার্তিক ও গণেশ ।
advertisement
আরও পড়ুন: কাগজের তৈরি দুর্গাপ্রতিমা! তাক লাগালেন জলপাইগুড়ির আইন-ছাত্র কুণাল
কিভাবে এই পুজো শুরু হয় তার সঠিক কোন ইতিহাস জানা না গেলেও , মনে করা হয় পালবাড়ির আদিপুরুষ সর্ব্বোস্ব পাল একদিন হঠাৎ করেই একদিন স্বপ্নাদেশ পান এই পুজো শুরু করার । ব্যাস তারপর থেকেই শুরু হয় এই পুজো । তবে এই বাড়ির দুর্গাপুজো সবচেয়ে বেশি খ্যাতিমান ও জৌলুস অর্জন করে ওই বংশেরই সন্তান এককালের ভারত বিখ্যাত ওষুধ প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতা বটকৃষ্ণ পালের আমলে । তিনি শিবপুরের এই পাল বাড়িতেই ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন । তারপর কলকাতায় গিয়ে ওষুধের ব্যবসা শুরু করে জগৎবিখ্যাত হন । তার প্রতিষ্ঠিত বটকৃষ্ণ পাল এন্ড কোম্পানির ওষুধের সুপরিচিতি সেই সময় বিলেতের মাটিতেও ছিলো । পরে তার নামেই কলকাতার শোভাবাজারে বি কে পাল এভিনিউ এর নামকরণ হয় । হাওড়ার শিবপুরের বি . কে . পাল স্কুলও তারই নামেই প্রতিষ্ঠিত হয় ।
advertisement
advertisement
পাল বাড়িতে দেবী দুর্গার অভয়া মূর্তি হলেও সেখানে পুজো হয় শাক্ত মতে । শোনা যায় পালবাড়ির এই দুর্গা ও শিবপুরের রায় চৌধুরী বাড়ির দুর্গাকে দুই বোন রূপে কল্পনা করা হয় । রথযাত্রার দিন পালবাড়ির ঠাকুর দালানে বহু শতাব্দী প্রাচীন দেবী দুর্গার কাঠামোটিকে পুজোর মাধ্যমে শুরু হয়ে যায় মূর্তি গড়ার কাজ । ডাকের সাজে ধীরে ধীরে সুশোভিত হতে থাকে মায়ের মূর্তিটি । চিরাচরিত প্রথামত দূর্গাপুজোর নবমী তিথির ঠিক ১৫ দিন আগে কৃষ্ণনবমী তিথিতে বোধনের মাধ্যমে শুভ সূচনা হয় পাল বাড়ির দুর্গাপুজোর । উৎসবের আবহে সেজে উঠতে থাকে বহু শতকের এই প্রাচীন বনেদি বাড়ি ।
advertisement
আরও পড়ুন: ক্লাবের দুয়ারে দুর্গা! টাকা না থাকলেও পুজো হবে, পাশে চোরবাগান সর্বজনীন
দেবীর আরাধনার পাশাপাশি এরপর থেকে নবমী পর্যন্ত টানা ১৫ দিন ধরে চলে চণ্ডীপাঠ। পাল বাড়ির পুজোর এরকমই আরও নানান বৈচিত্র্য রয়েছে । এখনকার পুজোয় মাকে অন্নভোগ দেওয়ার প্রথা নেই । বদলে লুচি , মিষ্টি , ফলের মাধ্যমেই দেবী দুর্গাকে ভোগ দেওয়া হয় । সপ্তমীর দিন সকালে গঙ্গার পরিবর্তে বাড়ির ঠাকুরদালানেই নবঘটের জলের মাধ্যমে স্নান করানো হয় কলা বউকে । অষ্টমীর সকালের পুজোয় বাড়ির ও পাড়ার ৩০ থেকে ৩৫ জন মহিলারা একসাথে ধুনো পোড়ান । মায়ের আরাধনায় পুজোর তিন দিন বলিদানও হয় । সপ্তমীতে পাঠাবলি , অষ্টমীর সন্ধিপুজোতে একটি সম্পূর্ণ কালো পাঠাবলি ও নবমীতে পাঠাবলি , ফল বলি ও সব শেষে মোষ বলি হয় পাল বাড়িতে । এখানকার সন্ধিপুজোয় বাড়ির মেয়েরা শামিল হতে পারেন না । সন্ধিপুজোর সমস্ত কাজই বাড়ির ছেলেরা মিলে সম্পন্ন করেন । শোনা যায় , বহু বছর আগে সন্ধিপুজোর ঠিক প্রাক মুহুর্তে হাওড়ার বিখ্যাত আন্দুল রাজবাড়ি কামান দাগা হতো । সেই কামানের শব্দ শোনার পরই সন্ধিপুজোর শুভারম্ভ হতো পাল বাড়িতে । যদিও এখনও রীতি মেনেই সন্ধিপুজো শেষ হয় হোম যজ্ঞের মাধ্যমে ।
advertisement
আর পাঁচটা বাড়ির সাথে নিয়মের নানান বৈচিত্র্য রয়েছে সিঁদুর খেলাতেও । এখানে দশমির সকালে বরণের আগেই ঠাকুরকে সিঁদুর ছুঁইয়ে পাল বাড়ির মহিলারা মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায় । সিঁদুরের লাল রঙে রেঙে ওঠে মায়ের মুখ । যদিও প্রতিমা নিরঞ্জনের ক্ষেত্রেও পালবাড়ির একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে । মাকে কাঁধে করে নিয়ে বাড়ির ছেলেরা গঙ্গা পর্যন্ত নিয়ে আসেন নিরঞ্জনের জন্য । যদিও কালের নিয়মে ও লোকবলের অভাবে এখন লরি করেই গঙ্গা বক্ষের দিকে অগ্রসর হয় পাল বাড়ির দুর্গা প্রতিমা ।
advertisement
আসবেন কিভাবে ? মন্দিরতলা বাসস্টপে নেবে টোটো বা রিক্সায় চেপে তাকে পাল বাড়িতে নিয়ে যেতে বলুন । অবশ্য পায়ে হেঁটেও নবগোপাল মুখার্জী লেনের পাল বাড়ি মাত্র মিনিট দশেকের রাস্তা ।
ঠিকানা - ৩৮ , নবগোপাল মুখার্জি লেন , শিবপুর , হাওড়া - ৭১১১০২
Santanu Chakraborty
বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
Durga Puja 2021 ‍| Traditional Durga Puja: সাড়ে ৩০০ বছরের রীতি মেনে দুর্গাপুজো, শিবপুরের পাল বাড়িতে ১৫ দিন ধরে চলে চণ্ডীপাঠ!
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement