কলকাতা: সাগরদিঘি উপনির্বাচনের হারে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই দুষল মুখ্যমন্ত্রীর তৈরি কমিটি। সাগরদিঘির নির্বাচনে হারের কারণ খুঁজতে ৫ সদস্যের কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সূত্রের খবর, কমিটি অনুসন্ধান করে দেখেছে হারের কারণ একাধিক। তবে, মূলত স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং রাজ্য সরকারের প্রকল্পের সঠিক প্রচার ও সুবিধা থেকে বঞ্চনার কারণে স্থানীয় মানুষ শাসক দলের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে বলে মনে করেছে কমিটি। যদিও, কমিটির এই রিপোর্টকে 'মনগড়া রিপোর্ট' বলে মনে করছেন বিক্ষুব্ধ জেলা নেতৃত্বের একাংশ।
২ মার্চ সাগরদিঘির ফল প্রকাশের পর হারের কারণ পর্যালোচনা করতে ৫ সংখ্যালঘু মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, সাবিনা ইয়াসমিন, গোলাম রব্বানি, জাভেদ খানদের নিয়ে গড়া কমিটি কয়েক দফায় বৈঠকের পর সাগরদিঘির হারের কারণ নিয়ে তাদের রিপোর্ট চূড়ান্ত করেছে। খুব শীঘ্রই সেই রিপোর্ট তারা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পেশ করবেন।
আরও পড়ুন: হায়দরাবাদ-সহ তেলেঙ্গানা জুড়ে ব্যাঙ্গাত্মক পোস্টার, ব্যানারে শুভেন্দু অধিকারী! তুমুল আলোড়ন
সূত্রের খবর, কমিটির অন্তর্তদন্তে সাগরদিঘির হারের জন্য একাধিক কারণ উঠে এসেছে। তবে, মূলত দুটি বিষয়কে তারা হারের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন। এই দুটি কারণ হল ১) স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়হীনতা। ২) রাজ্যের নানা উন্নয়ন মূলক প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চনার কারণে সব সম্প্রদায়ের মানুষের ক্ষোভ।
কমিটি পর্যালোচনা করে দেখেছে, সাগরদিঘির নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণার পর, দলীয় নেতৃত্ব একযোগে কাজ করেনি। সাংসদ,বিধায়ক থেকে শুরু করে জেলা, ব্লক স্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে কোন সমন্বয় ছিল না। দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পরে, দলের অভ্যন্তরে তৈরি ভিন্ন মতকে প্রশমিত করে দলীয় প্রার্থীকে জেতানোর লক্ষ্যে ঝাঁপানোর ক্ষেত্রে নেতৃত্বের মধ্যে অনীহা রয়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি, আবাস থেকে শিক্ষার মতো নানা ক্ষেত্রে শাসক দলের দুর্নীতি ও স্বজনপোষনের ফলে মানুষের মনে তৈরি ক্ষোভের প্রতিফলন পড়েছে সাগরদিঘির ফলে। তবে, মমতা বন্দোপাধ্যায় বা তৃণমূলের ওপর থেকে সাগরদিঘির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, বিরোধীদের এই দাবির কোন সত্যতা খু্ঁজে পায়নি এই কমিটি।
আরও পড়ুন: অ্যাডিনোর দোসর ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, বড় পদক্ষেপ রাজ্যের! ঘোষণা মুখ্যসচিবের
যদিও, দলেরই একটি অংশ এই কমিটির রিপোর্টকে 'মনগড়া রিপোর্ট' বলে মনে করছে। এদের অনেকের মতে, সাগরদিঘির প্রার্থী নির্বাচনেই ভুল হয়েছিল। স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে একতরফা ভাবে প্রার্থী ঘোষণা মেনে নিতে পারেনি অনেকেই। এদিকে, সাগরদিঘির ময়না তদন্তে কমিটি গড়ে দিলেও, জেলার সাংসদ ও সভাপতি খলিলুর রহমান শনিবার সাগরদিঘির নেতৃত্বকে বৈঠকে ডেকেছিলেন। ওই বৈঠকে ডাক পাওয়া জেলার এক বিধায়ক বলেন, ''বৈঠকে আসার জন্য মেসেজ পেয়েছি। কিন্তু, বৈঠকের আগেই তো সংবাদ মাধ্যমে জেলা সভাপতি সাগরদিঘির হারের জন্য দলীয় অন্তর্ঘাতকেই দায়ী করেছেন। তাহলে কি তার সিদ্ধান্তকে সিলমোহর দেওয়ার জন্য তিনি বৈঠক ডাকলেন? আসলে, পরাজয়ের পর এখন পিঠ বাঁচাতে অন্তর্ঘাত তত্ত্ব খাঁড়া করছেন খলিলুর। সবাই জানে হারের কারণ কী।''
গত বৃহস্পতিবার, আবু তাহের, নাদিমূল হক, মৌসম নূর, ইমানি বিশ্বাস, আক্রুজ্জামানের মত সংখ্যালঘু সাংসদ ও বিধায়কদের বিধানসভায় নিজের ঘরে ডেকে ছিলেন ফিরহাদ হাকিম। ঘনিষ্ঠ মহলে এই সাংসদ বিধায়করা কেউই নাকি সিদ্দিকুল্লা বা খলিলুরের তদন্তে কোনও আস্থা দেখাতে চাননি।
রাজনৈতিক মহলের মতে, সিদ্দিকুল্লাদের রিপোর্ট সাগরদিঘির হারের পেছনে 'প্রকৃত কারণ' কতটা চিহ্নিত করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় থাকলেও, হারের জন্য এলাকায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে অন্যতম কারণ, সেটা চিহ্নিত করতে পেরেছে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।