#কলকাতা: করোনা থেকে বাঁচতে এখন একটাই উপায়- তা হল কোভিড ভ্যাকসিন। বিশেষজ্ঞদের মত, গণহারে কোভিড ভ্যাকসিন নিলে করোনা থেকে বাঁচা সম্ভব। এক্ষেত্রে অনেকেই কোভিড ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও এবিষয়েও নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, ভ্যাকসিন নিলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও অনেকে কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও কোভিডে আক্রান্ত হলেও সেক্ষেত্রে ঝুঁকি কম থাকে। পাশাপাশি কোভিডের বুস্টার ডোজ নেওয়ার উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইতিমধ্যে কোভিড বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করেছে। কিন্তু কোভিড বুস্টার ডোজ নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। অনেকে আবার মনে করছেন, কোভিডের তৃতীয় ডোজ এবং বুস্টার ডোজ একই। কিন্তু পুরো বিষয়ের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু পার্থক্য। যা জানা দরকার।
কোভিডের বুস্টার ডোজ ও তৃতীয় ডোজের মধ্যে কী কী পার্থক্য রয়েছে?
কোভিডের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরেও দেখা গিয়েছে অনেকেই ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্ত হয়েছেন। আর এর পরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে এই সমস্যাটি। কোভিড ভ্যাকসিনের মাধ্যমে কী ভাবে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টকে হারানো সম্ভব তা নিয়ে শুরু হয় যাবতীয় গবেষণা। ভারতেও এই নিয়ে গবেষণা চলছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ এবং বুস্টার ডোজ দু'টি এক নয়। ভ্যাকসিন মূলত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং তার সঙ্গে ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতেও কার্যকরী ভূমিকা পালণ করে। কিন্তু কোভিড বুস্টার ডোজ এবং কোভিড তৃতীয় ডোজের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। সব তথ্য তুলে ধরা হবে এই প্রতিবেদনে।
কোভিড বুস্টার ডোজ কী?
কোভিড বুস্টার ডোজ হল মূলত একটি বিশেষ ডোজ যা কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার পাঁচ থেকে ছয় মাস পর দেওয়া হয়। কারণ ভ্যাকসিন ডোজ দেওয়ার পাঁচ-ছয় মাস পর ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা অনেকটা কমে যায়। ফলে কোভিড আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। যাতে কোভিড ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা না কমে সেকারণে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়। বহু দেশে ইতিমধ্যে কোভিড বুস্টার ডোজ দেওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এবং বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কোভিড বুস্টার ডোজ নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ এর ফলে কোভিডের বিভিন্ন ভ্যারিয়ান্ট থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
এদিকে বিভিন্ন গবেষণায় প্রকাশ, কোভিডে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা যাঁদের সব থেকে বেশি তাঁদের ক্ষেত্রে কোভিড বুস্টার ডোজ নেওয়া ভীষণ দরকারি। এছাড়াও যাঁরা কোভিডের প্রথম সারির যোদ্ধা তাঁদের ক্ষেত্রেও বুস্টার ডোজ অত্যন্ত কার্যকরী। পাশাপাশি যাঁদের বয়স ৫০ বছর এবং তার বেশি তাঁদের ক্ষেত্রেও কোভিড ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়া যেতে পারে।
বর্তমানে যে সব দেশে কোভিড বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে সেই সব দেশে মূলত হাই রিস্ক বা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের মধ্যেই বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে।
কোভিডের থার্ড ভ্যাকসিন কখন ব্যবহার করা হতে পারে?
যদি বুস্টার ডোজের সঙ্গে তুলনা করা হয় তাহলে কোভিডের তৃতীয় ডোজ বেশ কিছুটা ভিন্ন। মূলত যাঁদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজে সেভাবে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠেনি তাদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এক্ষেত্রে কোভিড ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ দেওয়া হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বেশ কিছুটা উন্নতি সম্ভব। এবং টিকার প্রথম দু'টি ডোজে যে পরিমাণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠা সম্ভব এক্ষেত্রেও তৃতীয় ডোজ নেওয়ার পর সম পরিমাণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠতে পারে।
ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও কি কোনও পার্থক্য রয়েছে?
শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে তা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে কোভিড ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ। কোভিডের তৃতীয় ডোজ যেমন প্রথম দু'টি ডোজের মতো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে তেমনই বুস্টার ডোজ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে তা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম পরিমাণ ওষুধ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে ঢোকানো হয়। এমনকী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যেতে পারে।
কবে থেকে কোভিডের এই ডোজগুলি দেওয়া হতে পারে?
বুস্টার ডোজ মূলত কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার ছয় মাস পর নেওয়া হয়। এবং ২১ থেকে ২৮ বছর বয়সীদের মধ্যে এই ভ্যাকসিন ডোজ দেওয়া হয়।
অনেকের মতে, বর্তমানে কোভিড ভ্যাকসিনের সাপ্লাইয়ের ক্ষেত্রে একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক জায়গায় সঠিকভাবে ভ্যাকসিন না পৌঁছনোর ফলে অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই সবাই যাতে কোভিড ভ্যাকসিন পায় সর্বপ্রথম সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কারণ ভ্যাকসিনের প্রথম দু'টি ডোজ নেওয়া সবথেকে জরুরি। এবং তার পর ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
ভ্যাকসিন নিলে কি কোভিড থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব?
এই বিষয়টি নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। তবে এটাও ঠিক ভ্যাকসিন যে কার্যকরী তার প্রমাণ ইতিমধ্যে পাওয়া গিয়েছে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর অনেকের শরীরে কোভিড আক্রমণ করলেও তাঁদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক কম। দেখা গিয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না, পরিস্থিতি মারাত্মক হয় না।
ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমের দিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনীহা তৈরি হয়েছিল। গুজব ছড়িয়েছিল অনেক। কিন্তু সেই পরিস্থিতি অনেকটাই কেটে গিয়েছে। বর্তমানে কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ জন্মেছে। তবে দেশের বহু প্রান্তে এখনও অনেক মানুষ ভ্যাকসিন নিতে পারেননি।
এদিকে উৎসবের মরসুম শুরু হওয়ায় চিন্তায় প্রশাসন। কোভিড সংক্রমণ যাতে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সংক্রমণ যাতে বেশি না বাড়ে তার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এক নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে কোভিড সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় প্রশাসন প্রয়োজন মতো নিয়ম জারি করতে পারে। ভিড় এড়িয়ে চলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কোভিড পরিস্থিতিতে উৎসবের কথা মাথায় রেখে সরকারের তরফে টিকাকরণেও জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে সংক্রমণ তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কম ছড়ানোর সম্ভাবনা। এবং যতটা সম্ভব ভিড় যাতে না হয় তার চেষ্টা করা হচ্ছে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Covid 19 Vaccine