Explained | Omicron : ওমিক্রনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাতিয়ার হতে পারে দেশে তৈরি এই টিকা!
- Published by:Swaralipi Dasgupta
Last Updated:
Explained | Omicron : ফাইজার-বায়োএনটেক (Pfizer-BioNTech) এবং মডার্না (Moderna)- এমআরএনএ টিকা (mRNA Vaccine) তৈরি করেছে।
#নয়াদিল্লি: দেশের প্রথম মেসেঞ্জার আরএনএ (RNA), বা এমআরএনএ (mRNA) টিকা পুণের জেননোভা বায়োফার্মাসিউটিক্যালস (Gennova Biopharmaceuticals) তৈরি করেছে। পুণে ভিত্তিক জেননোভা বায়োফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড জৈব প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গবেষণা ও উদ্ভাবনের কাজ করে। এই সংস্থা বিভিন্ন জটিল অসুখের নিরাময়ের জন্য ওষুধ এবং টিকা তৈরি করে সেগুলিকে বাজারজাত করে। সংস্থাটি তাদের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের শেষ পর্য়ায়ে রয়েছে। এছাড়াও ওমিক্রন প্রজাতির মোকাবিলা করার জন্য একটি প্রজাতি-নির্দিষ্ট সংস্করণ টিকা আনার জন্যও কাজ করছে তারা। mRNA টিকাগুলির মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস (Coronavirus) থেকে সুরক্ষা দেওয়ার একটি শক্তিশালী ক্ষমতা আছে। ফাইজার-বায়োএনটেক (Pfizer-BioNTech) এবং মডার্না (Moderna)- এমআরএনএ টিকা (mRNA Vaccine) তৈরি করেছে। বেশ কয়েকটি উন্নত দেশের টিকাকরণ কর্মসূচির মূল ভিত্তি এই টিকা দুটি।
এমআরএনএ ভ্যাকসিন:
এমআরএনএ ভ্যাকসিনের (mRNA Vaccine) ক্ষেত্রে মেসেঞ্জার আরএনএ (Messenger RNA) কোড থাকে। যা শরীরে প্রবেশ করে করোনাভাইরাস প্রোটিনের নতুন সংস্করণ তৈরি করে। ভ্যাকসিনেশনের পরে ইমিউন সেল স্পাইক প্রোটিন (Spike Protein) টুকরো টুকরো করে দেয় এবং অ্যান্টিবডি তৈরি হতে থাকে। পরেও যদি কেউ কোভিড ১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হন, তা হলে এই অ্যান্টিবডিই (Antibody) ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শরীরকে সাহায্য করে।
advertisement
advertisement
জেননোভা টিকা কী?
জেননোভা বায়োফার্মাসিউটিক্যালস বলেছে যে জেনোভা হল ভারতের একমাত্র কোম্পানি যারা নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে একটি টিকা তৈরি করতে mRNA প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করেছে। এটি মার্কিং সংস্থা এইচডিটি বায়োটেক কর্পোরেশনের (HDT Biotech Corporation) সহযোগিতায় এইচজিসিও ১৯ (HGC019) নামে পরিচিত টিকা তৈরি করেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে Sars-CoV-2-র জিনোম প্রকাশিত হওয়ার ঠিক পরেই টিকা তৈরির কাজ শুরু হয় বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। গত বছরের অগাস্টে রিপোর্ট করা হয়েছিল যে ল্যাবরেটরিতে এই টিকার প্রি-ক্লিনিকাল ট্রায়ালে সাফল্যের পর তিন পর্যায়ের ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এই টিকা প্রাথমিক গবেষণায় নিরাপদ এবং কার্যকর বলে প্রমাণিত হওয়ার পরে ভারতে এটির মানুষের ওপরে পরীক্ষা চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালেও সাফল্যের পথে এই টিকা। সব ঠিক থাকলে খুব তাড়াতাড়ি এই টিকা নিয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হবে।
advertisement
জানা গিয়েছে যে জেননোভা তার দুই-ডোজের টিকার দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের ডেটা জমা দিয়েছে, যা ডেল্টা প্রজাতিকে টার্গেট করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ওমিক্রন প্রজাতির বিরুদ্ধে টিকার অন্য একটি সংস্করণেও কাজ করছে সংস্থাটি।
একটি মেসেঞ্জার আরএনএ টিকা কী?
মেসেঞ্জার আরএনএ টিকা নিউক্লিক অ্যাসিড টিকা (Nucleic Acid Vaccines) বিভাগের অন্তর্গত, যেগুলি রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস বা প্যাথোজনে থেকে জেনেটিক উপাদান ব্যবহার করে শরীরের মধ্যে এটির বিরুদ্ধে একটি ইমিউন প্রতিক্রিয়া (Immune Response) দিতে শুরু করে। সমস্ত টিকা প্রথমে শরীরে প্যাথাজেনের প্রবেশ করিয়ে দেয়, যাতে ইমিউন সিস্টেম এটিকে চিনতে পারে এবং ভবিষ্যতে এটির বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। ভাইরাসের হয় দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় অংশ শরীরে ঢোকানোর মাধ্যমে টিকা কাজ শুরু করে।
advertisement
কিন্তু ডিএনএ বা আরএনএ টিকার মতো নিউক্লিক অ্যাসিড টিকা যা করে তা হল শরীরে প্যাথোজেনের (Pathogen) জেনেটিক কোড ঢোকানো। এটি প্যাথোজেনকে সনাক্ত এবং আক্রমণ করতে ইমিউন সিস্টেমের জন্য কোষগুলিকে টার্গেট প্রোটিন তৈরি করতে উদ্দীপিত করে। এমআরএনএ সিকোয়েন্সকে এমনভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে দেহকোষে ঢুকলে সেটি ভাইরাল প্রোটিনের মতো প্রোটিন তৈরি করতে কোষকে উদ্দীপিত করতে পারে। ভারত ইতিমধ্যেই বিশ্বের প্রথম ডিএনএ টিকাকে অনুমোদন দিয়েছে। জাইকোভ-ডি (ZyCoV-D) নামের এই টিকা তৈরি করেছে আমেদাবাদের জাইডাস ক্যাডিলা (Zydus Cadila)।
advertisement
যেহেতু এই ধরনের টিকাগুলি ভাইরাসের কোনও জীবন্ত উপাদান ব্যবহার করে না, তাই এই টিকা থেকে রোগ শুরু হওয়ার কোনও ঝুঁকি নেই। কিন্তু টিকা তৈরির এই পদ্ধতিটি তুলনামূলকভাবে নতুন। এইচআইভি, জিকা ভাইরাস-সহ বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে ডিএনএ এবং আরএনএ টিকা তৈরি করা হয়েছে বা হচ্ছে। এখন করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও এই ধরনের টিকা মানুষের ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হয়েছে।
advertisement
জেনোভার এইচজিসিও ১৯ টিকার কাছে ভাইরাসের অ্যান্টিজেন-স্পাইক প্রোটিন তৈরি করার জন্য হোস্ট কোষগুলিকে গাইড করার জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য রয়েছে এবং শরীরে ইনজেকশন দেওয়ার পরে কোষগুলিকে mRNA এবং অ্যান্টিজেনের অসংখ্য অনুলিপি তৈরি করতে নির্দেশ দেয়। অন্যান্য ইমিউন কোষগুলিও স্পাইক প্রোটিনের উপর কাজ করে, এইভাবে শরীর করোনাভাইরাস সনাক্ত করতে এবং নিজেকে রক্ষা করতে শেখে।
advertisement
এমআরএনএ টিকার সুবিধা কী কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এমআরএনএ টিকা করোনাভাইরাসের ক্রমাগত ও দ্রুত পরিবর্তনগুলির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য উপযুক্ত। কারণ নতুন প্রজাতিগুলিকেও টার্গেট করার করা যেতে পারে। কারণ এক্ষেত্রে মূল ফ্যাক্টরটি হল টার্গেট প্যাথোজেনের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা। এমকিউর উল্লেখ করেছে যে এমআরএনএ টিকা দ্রুত বিকাশের টাইমলাইনে আদর্শ। এই টিকাগুলি সম্পূর্ণ কৃত্রিম এবং বৃদ্ধির জন্য হোস্টের প্রয়োজন হয় না, উদাহরণস্বরূপ ডিম বা ব্যাকটেরিয়া। তারা বলেছে যে এই টিকার উৎপাদনের জন্য সময় কম লাগে। করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স হওয়ার ২ মাসের মধ্যেই মডার্নার এমআরএনএ (mRNA) টিকার ট্রায়াল শুরু হয়ে যায়।
এইচজিসিও ১৯-এর আর একটি সুবিধা হল এর এমআরএনএ-র গঠন। এই এমআরএনএ নিজে নিজেই বর্ধিত হতে পারে। এরফলে কম পরিমাণের ইঞ্জেকশন দিলেই সেখান থেকে বহুক্ষণ অ্যান্টিজেন নির্গত হয়। লিওনের এই ধর্মটি ব্যবহার করে ‘এইচজিসিও ১৯’ টিকার বিভিন্ন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা গড়ে ওঠে। এই টিকাকে সহজেই সংরক্ষণ করা যায়। এটি ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করা যায়। এর অর্থ হল এটি ভারতে সহজেই সংরক্ষণ এবং পরিবহন করা যাবে। এটি খুব কম পরিমাণে প্রাণীদেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
ওমিক্রনের ক্ষেত্রে কেন কাজ করবে না এই সব টিকা?
আসলে করোনার এই নতুন প্রজাতির (Omicron Which Vaccine to Work) সব থেকে বেশি মিউটেশন হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) ওমিক্রনকে ‘উদ্বেগজনক ভ্যারিয়ান্ট’ বা ‘ভ্যারিয়ান্ট অফ কনসার্ন’ বলে আখ্যা দিয়েছে। কারণ গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এই প্রজাতির ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের ৩০ বার মিউটেশন হয়ে গিয়েছে। আর এই স্পাইক প্রোটিনের মাধ্যমেই ভাইরাস মানব দেহের কোষে কোষে প্রবেশ করার রাস্তা সুগম করে তোলে। আর ভ্যাকসিন স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে আমাদের শরীরকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা প্রদান করে।
Location :
First Published :
January 28, 2022 8:19 AM IST