‘আমার মামলাটা একদিন আমিই লড়তে চাই...’, জানালেন CBSE-তে ৯৫ শতাংশ নম্বর পাওয়া অ্যাসিড আক্রান্ত কাফি
- Published by:Siddhartha Sarkar
- news18 bangla
Last Updated:
Chandigarh Acid attack survivor tops CBSE class 12: কাফি জানিয়েছে, “আমি এই ফলাফল প্রত্যাশা করিনি। লিস্ট দেখার পর আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছিল না। বিষয়টা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। আমি কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম। কিন্তু তার থেকেও বেশি নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হয়েছে- যখন খুব কম সংখ্যক মানুষ আমার উপর ভরসা রেখেছিলেন।’’
চণ্ডীগড়: সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে সিবিএসই ২০২৫ (CBSE 2025 Results) দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার ফলাফল। সেই পরীক্ষায় দুর্দান্ত ফল করে সকলকে চমকে দিয়েছে চণ্ডীগড়ের কন্যা বছর সতেরোর কাফি (Kafi)। তার লড়াইটা যদিও সকলের মতো মসৃণ ছিল না। কারণ ছোটবেলাতেই অ্যাসিড হামলার শিকার হয়েছিল সে। মাত্র ৩ বছর বয়সে অর্থাৎ ২০১১ সালের হোলির সময় অ্যাসিড হামলার শিকার হয়েছিল কাফি। সেই সময় হরিয়ানার হিসার জেলায় বুধানা গ্রামে থাকত সে। সেখানেই ঈর্ষার কারণে তিন প্রতিবেশী মিলে ছোট্ট কাফির উপর অ্যাসিড হামলা চালিয়েছিল। আর সেই হামলায় পুড়ে গিয়েছিল তার মুখ এবং হাত। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তার দৃষ্টিশক্তিও। এই এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও হাল ছাড়েনি কাফি। বরং নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে সে।
কাফি পড়াশোনা করেছে চণ্ডীগড়ের ইনস্টিটিউট ফর দ্য ব্লাইন্ড থেকে। স্কুলের মধ্যে হিউম্যানিটিজ স্ট্রিমে সর্বোচ্চ ৯৫.৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে সকলকে যেন তাক লাগিয়ে দিয়েছে কাফি। যদিও কিশোরীর এহেন সাফল্য নিয়ে স্কুলে তেমন হইচই হয়নি, কিন্তু চণ্ডীগড়ের এক ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাড়ি যেন এই নীরব জয়ের আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে!
advertisement
advertisement
কাফির চোখে আইএএস অফিসার হওয়ার স্বপ্ন। দ্য টেলিগ্রাফ-এর অনলাইন এডুগ্রাফ-কে এক সাক্ষাৎকারে নিজের যাত্রাপথ, অধ্যবসায় এবং বিচার পাওয়ার আশার কথা তুলে ধরেছে সে। উত্তেজনায় রীতিমতো কাঁপতে কাঁপতে কাফি জানিয়েছে, “আমি এই ফলাফল প্রত্যাশা করিনি। লিস্ট দেখার পর আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছিল না। বিষয়টা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। আমি কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম। কিন্তু তার থেকেও বেশি নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হয়েছে- যখন খুব কম সংখ্যক মানুষ আমার উপর ভরসা রেখেছিলেন।’’
advertisement
মাত্র তিন বছর বয়সেই অ্যাসিড হামলার শিকার হয়েছিল কাফি। তাঁর কথায়, “পারিবারিক কলহ চলাকালীন এক প্রতিবেশী আমার উপর অ্যাসিড ছোড়ে। যা আমার চোখের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু আমার ভবিষ্যৎ কেড়ে নিতে পারেনি। আমি সেই দিনের কথা বেশি কিছু মনে করতে পারি না। কিন্তু বছরের পর বছর হাসপাতালে ছোটাছুটির কথা মনে রেখেছি। আমি সব সময় আমার মা-বাবাকে পাশে পেয়েছি। ওঁরাই আমার স্তম্ভ।”
advertisement
বছরের পর বছর ধরে চিকিৎসার সময় কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে কাফিকে। এরপর সে চণ্ডীগড়ের ইনস্টিটিউট ফর দ্য ব্লাইন্ডে ভর্তি হয়। তাঁর বাবা পবন পেশায় হরিয়ানা সেক্রেটারিয়েটের একজন পিওন। আর মা সুমন গৃহবধূ। দু’জনেই পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু কন্যাকে উচ্চশিক্ষা দেওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর ছিলেন তাঁরা। মাত্র ১০ বছর বয়সে নিজের শক্তি এবং স্থিতিশীলতা ফিরে পাওয়ার পর কাফি দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে সরাসরি ষষ্ঠ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়। এই যাত্রাপথটা এতটাও সহজ ছিল না। কাফির বক্তব্য, প্রাথমিক ভাবে বিষয়টা বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাই আর বিষয়টি সহজ হয়ে ওঠে।
advertisement

কিন্তু সিবিএসই দ্বাদশ বোর্ডের পরীক্ষার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিল কাফি? জবাবে সে বলে, “কীভাবে স্ক্রিন রিডার ব্যবহার করতে হয়, তা রপ্ত করেছিলাম। আর আমি প্রচুর ইউটিউব ভিডিও এবং অডিও কন্টেন্ট-লেকচারও শুনতাম। সব সময় তো আর হাতের কাছে ব্রেইল বই পেতাম না। তাই হাতের কাছে যা পেতাম, তা দিয়েই পড়াশোনা করতাম। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা করে পড়াশোনা করতাম।”
advertisement
সিভিল সার্ভিসে বসে আইএএস অফিসার হতে চায় কাফি। কিন্তু তার লক্ষ্য শুধু পড়াশোনাই নয়। আসলে কাফির পরিবারটি এখনও বিচার পাওয়ার জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা পায় সে নিজেও। আত্মবিশ্বাসী সুরে সে বলে, “আমি ভাল করে পড়াশোনা করছি। যাতে এক দিন আমি আমার নিজের মামলাটা লড়তে পারি। দৃঢ় সঙ্কল্পের সঙ্গে সে আরও জানায়, আমার বিশ্বাস, আমার এমন একটা স্বর রয়েছে, যা সকলের শোনার যোগ্য। আর এক দিন আমি এটাকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলব।”
advertisement
এখানেই শেষ নয়, যাঁরা পরিস্থিতি এবং প্রতিকূলতার সঙ্গে প্রত্যহ লড়াই করে চলেছেন, তাঁদের উদ্দেশ্যেও বার্তা দিয়েছে কাফি। তার কথায়, “আপনার পরিস্থিতি যেন আপনার পরিচয় না হয়। আপনার স্বপ্নগুলো বৈধ। আপনাকে কঠিন রাস্তা নিতে হতে পারে। কিন্তু যদি আপনি এর উপর দিয়ে হাঁটেন, তাহলে এক পা এক পা করে আমি একটা সুন্দর জায়গায় পৌঁছে যেতে পারবেন।”
আমাদের এই দেখনদারির দুনিয়ায় সকলকে তাঁদের চেহারা দিয়েই যেন পরিমাপ করা হয়। আর সেখানে দাঁড়িয়ে কাফির বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা, দৃঢ় সঙ্কল্প এবং উদ্যম যেন জ্বলজ্বল করছে। আর কাফির এই উদ্যম শুধু যে তার ভবিষ্যতের কাহিনি লিখছে, তা কিন্তু নয়। এর পাশাপাশি তার উদ্যম যেন সারা দেশের হাজার হাজার মানুষকে অনুপ্রেরণাও জোগাচ্ছে।
view commentsLocation :
Chandigarh
First Published :
May 17, 2025 4:05 PM IST